সরকারি নিয়ম-নীতি ও মালিকদের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা উপেক্ষা করে প্রতি বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার চট্টগ্রাম নতুন ব্রীজ থেকে লোকাল বাসগুলো জলদী পর্যন্ত ৪৫ টাকা ভাড়ার পরিবর্তে রিজার্ভ বোর্ড টাঙ্গিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ৮০/১০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে। চট্টগ্রাম বাঁশখালী পি.এ.বি (পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী) সড়কে চলাচলরত নিয়মিত বাস যাত্রীরা মালিক শ্রমিকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। স্পেশাল সার্ভিস বাসগুলোতে যাত্রীবাহী নাম ব্যবহার হলেও বাসের ভিতরে মালামাল ও ছাঁদের উপর মুরগির খাঁচা, মাছের ড্রাম, অতিরিক্ত মালামাল ও যাত্রী বোঝায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী যাত্রীরা প্রশাসনের কাছে ধরণা দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করে যে কোন সময় যাত্রী ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে।
সরকারি নিয়ম অনুসারে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া আদায় হওয়ার কথা ১.৪৫ টাকা কিন্তু সেই নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে ভাড়া আদায় করা হয় প্রতি কিলোমিটার ২ টাকার বেশি। কিছু বাস ছাড়া অধিকাংশ বাস লক্কর-ঝক্কর অবস্থায় চলাচল করছে। এ বাসগুলো সাইনবোর্ড পরিবর্তন করে সপ্তাহে ৩ দিন স্পেশাল ও সুপার সার্ভিস নাম দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বহদ্দারহাট থেকে ছেঁড়ে আসা বাসগুলো নতুন ব্রীজ এলাকায় স্পেশাল ও সুপার সার্ভিস নাম দিয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত যাত্রী সীট পরিপূর্ণ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে। ঐ সময় শ্রমিকরা হাঁকডাক দিয়ে ঐ বাঁশখালী, ঐ বাঁশখালী বলে যাত্রীদের ডাক দিতে থাকে। বাস গাড়ী পূর্ণ হলেই নতুন ব্রীজ থেকে বাঁশখালী গন্তেব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বাসগুলো নতুন ব্রীজ এলাকায় দীর্ঘক্ষণ যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করা নিয়ে চালক, শ্রমিক ও যাত্রীদের সাথে প্রতিনিয়ত তর্ক বিতর্ক, বাক্্বিতন্ডা চলতে থাকে।
বাঁশখালী সড়কে চলাচলরত নিয়মিত যাত্রী শিক্ষক আহমদ সৈয়দ, শিক্ষিকা মিলি, ডাক্তার তাসনিম, ডাক্তার যবরিয়া শারমিন ও ছাত্রী ফরিদা ইয়াসমিন অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম বাঁশখালী সড়কের যাত্রীরা মালিক শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। প্রতি বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ঈদ মৌসুমের মত নগরীর নতুন ব্রীজ থেকে যাত্রীদের কাছ থেকে পুকুরিয়ার ২৫ টাকার ভাড়ার স্থলে ৮০/১০০ টাকা নেওয়া হয়। এ সড়কে চলাচলরত বাসগুলো আনোয়ারা কালারমার দিঘী থেকে জলদী পর্যন্ত যেখানে যাত্রী নামানো হয় নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে ৮০/১০০ টাকা ভাড়া দিতে বাধ্য হয়। প্রতিবাদ করলেই শ্রমিকদের হাতে যাত্রীরা লাঞ্চিত হয়। নগরীর নতুন ব্রীজ থেকে মোহাম্মদ রাশেদ নামের এক যাত্রীর কাছ থেকে পুকুরিয়া ইউনিয়নের চৌমুহনী এলাকার ভাড়া ২৫ টাকার স্থলে শ্রমিকরা ৮০ টাকা আদায় করে নেয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে শ্রমিকদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সড়কে ঐ সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে যানবাহন চলাচল আবার শুরু হয়।
গতকাল সরেজমিনে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম বাঁশখালী সড়কে নিয়মিত বাঁশখালী পি.এ.বি সড়কে নগরী থেকে আসা-যাওয়া করে শিক্ষক, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারী, চাকুরিজীবীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোর সকাল ৭ টায় বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে ১৫ মিনিট পর পর ছাড়া হলেও সন্ধ্যা ৭ টায় বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে বাঁশখালী থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখী বাস সকাল ৭ টা থেকে ছাড়া হলেও সন্ধ্যা ৫ টার পর প্রেম বাজার থেকে বাস ছাড়া বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি এ সড়কে চরম আকার ধারণ করেছে। যাত্রী কম অজুহাতে মালিক পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাঁশখালী চট্টগ্রাম সড়কে সি.এন.জি অটোরিক্সা ৮ হাজারে পরিণত হয়েছে। সড়ক পথে দুর্ঘটনাও বেড়েছে। প্রতিবেদকের কাছে যাত্রীদের অভিযোগ, বাস মালিক সমিতির একমুখী বাস চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখায় এবং বাইরের বাস মালিক বাঁশখালীতে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এ সড়কে চলাচলরত যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কক্সবাজার আরাকান সড়কে দিন রাত ২৪ ঘন্টা বাস চলাচল করলেও বাঁশখালী থেকে সন্ধ্যা পর বাস পাওয়া যায় না। শিক্ষক ফারুক আহমেদ আমার বাঁশখালীকে বলেন, বাঁশখালী সড়কে এস.আলম, সৌদিয়া, হানিফ, শ্যামলী সহ উন্নত মানের বাস চলাচল জরুরী। কক্সবাজার বিকল্প সড়ক হিসেবে দিবা রাত্রি বড় বাসগুলোর মালিকরা এ সড়ক দিয়ে বাস চলাচল চালু করলে সাধারণ যাত্রীদের সহযোগিতা পাবেন। মালিকদের ইচ্ছার কারণে ১৫ বছর ধরে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে ভাল-খারাপ দেড় শতাধিক বাস এ সড়কে চলাচল করছে।
বাঁশখালী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম আমার বাঁশখালীকে বলেন, পি.এ.বি সড়কের বাসগুলোকে যাত্রীসেবার জন্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। মালিকদের নির্দেশিকা তালিকা অনুযায়ী ভাড়া আদায়ের জন্য বলা হয়েছে। শ্রমিকদেরকে নির্দেষ দেয়া আছে অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়ার। কিন্তু শ্রমিকরা সে নিয়ম মানেনা, তাদেরকে এ বিষয়ে বকাঝঁকাও করা হয়।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা আমার বাঁশখালীকে বলেন, আইন শৃঙ্খলা ও উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় প্রধান সড়কের বাস চলাচলে জানজট নিরসনের জন্য অবৈধ স্টেশন উচ্ছেদের জন্য জন প্রতিনিধির প্রস্তাব এসেছে। বাস মালিকদের সাথে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। বাস চলাচল উন্নত করার জন্য মালিকদেরকে বলা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের সামনে থেকে বাসগুলো সরিয়ে নেয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম আমার বাঁশখালীকে বলেন, উপজেলা মাসিক সভায়ও বাঁশখালী বাসগুলোর অনিয়মের ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকেও মালিক শ্রমিকদেরকে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির জন্য অনেক বার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোন পরিবর্তন আসেনি। নগরী থেকে বাড়ী আসার পথে সপ্তাহের বন্ধের দিন যাত্রীরা বেশি হয়রানির শিকার হয় বলে অনেকে অভিযোগ করেছে।
এম.এস.এ
No comments:
Post a Comment