পাক বাহিনীর সাথে ৫দিন সম্মুখযুদ্ধ হয় রাঙামাটি হরিণায় :মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দীন চৌধুরী - আমার বাঁশখালী ডটকম AmarBanskhali.Com

ব্রেকিং নিউজ

শীর্ষ বিজ্ঞাপন

নিউজ এর উপরে বিজ্ঞাপন

Sunday, December 10, 2017

পাক বাহিনীর সাথে ৫দিন সম্মুখযুদ্ধ হয় রাঙামাটি হরিণায় :মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দীন চৌধুরী

মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দীন চৌধুরী

আমার বাঁশখালী ডেক্স: ভারতে ট্রেনিং শেষে বাংলাদেশে প্রবেশ করে রাঙ্গামাটির হরিণা এলাকায় ৫ দিন ধরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের সাথে সম্মুখযুদ্ধ হয়। দৈনিক পূর্বকোণের সাথে আলাপকালে চন্দনাইশের মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন চৌধুরী এই তথ্য জানান। তিনি জানান, আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার। তিনি জানতে পারেন বৈলতলীর সাবেক চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে ধোপাছড়িতে রয়েছেন। তখন তিনি পায়ে হেঁটে ধোপাছড়ি গিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করেন। সেখানে গিয়ে চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমানের সাথে দেখা করলে তিনি তাঁকে (জসিম উদ্দীন) সামশুদ্দীন ভূইয়ার নেতৃত্বে বৈলতলী হিন্দু পাড়া এলাকায় ট্রেনিং করার জন্য পাটিয়ে দেন। সেখানে ১৫/১৬ দিন ট্রেনিং নেয়ার পর বৈলতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় রাজাকারেরা তাকে তাড়া করেন। তখন সেখান থেকে পুনরায় ধোপাছড়ি গিয়ে চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমানের কাছে ফিরে যান। নেতৃত্বে ছিলেন পটিয়া থেকে নির্বাচিত তৎকালীন এমপি সুলতান আহমদ কুসুমপুরী । ২১ দিন ট্রেনিং শেষে তিনি বেরিয়ে পড়েন। প্রথমে পটিয়া ওহাবি মাদ্রাসায় হামলা চালান। দফায় দফায় ৪/৫ দিন হামলা করার পর সফল না হয়ে পুনরায় ধোপাছড়ি ফেরত আসেন। ১ সপ্তাহ পর একই গ্রুপ নিয়ে সাতকানিয়া রাস্তারমাথা এলাকায় ৭ জন রাজাকারকে পেয়ে তাদের এটাক করেন। সেখানে রাজাকারেরা সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত হলে তাদের নিকট থেকে ৭টি রাইফলে ও ৫টি ওয়ারলেস সেট নিয়ে চলে আসেন। এসময় তাদেরকে ভারতে যাওয়ার জন্য উপর থেকে নির্দেশ আসে। ধোপাছড়ি থেকে পায়ে হেঁটে ভারতে যাওয়ার পথে পুরাতন কাপ্তাইয়ে মিঝু বাহিনী ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের সাথে সংঘর্ষে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। তাকে ভারতে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। নভেম্বরের প্রথমদিকে তারা ভারতের দ্রেমাগ্রীতে পৌঁছেন। দ্রেমাগ্রীতে ১ নং সেক্টরে ট্রেনিংয়ের জন্য যোগদান করার পর ২৫ দিন ভারতীয় সৈন্যদের সাথে ট্রেনিংয়ে অংশ নেন। তখন তাদের হাতে কোন রকম গোলা বারুদ ছিল না। ট্রেনিং শেষে ভারতীয় সেনা বাহিনীদের সাথে হরিণা, বরকল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। প্রবেশ পথে হরিণা এলাকায় ৫ দিন ধরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হন। সেখানেও অনেক ভারতের সৈন্য মারা যায়। তখন তারা পুনরায় পিছু হটেন। তখন ভারতের দ্রেমাগ্রীতে গিয়ে অস্ত্র চাইলে ক্যাম্প থেকে এলএমজি, রকেট ল্যান্সার, রাইফেলসহ বিভিন্ন ভারী অস্ত্র নিয়ে পুনরায় তারা হরিণার দিকে রওনা হন। একই স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের সাথে বেশ কয়েকদিন সম্মুখযুদ্ধ চলে। অবশেষে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ সময় অনেক পাকিস্তানি সৈন্য মারা যায় এবং অন্যরা পালিয়ে যায়। তখন তারা পুনরায় ভারতের দিকে গিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাঙ্গামাটি হয়ে পুনরায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তখন পরিস্থিতি অনেকটা অনুকূলে ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার বার্তা শোনা যাচ্ছিল। ভারতীয় ১০ জনসহ তাদের ১৭১ জনের একটি গ্রুপ ছিল। তিনি বলেন, পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হাওয়ার পর রাঙ্গামাটিতে থেকে প্রথমে ধোপাছড়ি পরে নিজ এলাকায় এসে বশরত নগর রশিদিয়া মাদ্রাসার ক্যাম্পে যান। যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক ভাবে পটিয়ায় তাদের অস্ত্র জমা দেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও বিভিন্ন সরকার ক্ষমতা আসার পর যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার করেনি কেউ। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর জননেত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ২য় বার ক্ষমতায় এসে যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু সেখানে আমাদের এলাকার যুদ্ধ অপরাধীদের তালিকা পিছনে থাকায় তিনি নিজে বাদি হয়ে ২০১১ সালের ১১ মে যুদ্ধ অপরাধী ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় বৈলতলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহমদ ছৈয়দ চৌধুরী, তার ভাই নুরুল হক চৌধুরী, মো. ছৈয়দ চৌধুরীসহ ৩৬ জনকে আসামি করেন। সে মামলা ট্রাইব্যুনাল তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করলেও বর্তমানে মামলাটি বাক্সবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তিনি মামলাটি চালু করে প্রকৃত যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। সূত্র: দৈনিক পূর্বকোণ

1 comment:

পোস্টের নীচে বিজ্ঞাপন