আমার বাঁশখালী ডেক্স:
অন্যান্য
দিনের মতোই সকাল আটটা নাগাদ ভাইঝির ঘুম ভাঙিয়েছিলেন। অফিসে বেরোনোর সময়ে
ডেকে বলেছিলেন, সদর দরজা বন্ধ করে পড়তে বসতে। সবই চলছিল রুটিন মেনে। একটু
পরেই অবশ্য সমস্ত হিসেব উল্টে গেল! ঘরের ভিতরেই মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল সেই
ভাইঝিকে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম নীলাঞ্জনা দাস
(১৩)। শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার হরিদেবপুরের
একটি বাড়ি থেকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে বাঁধা অবস্থায় তার ঝুলন্ত
দেহ পাওয়া যায়। তবে তদন্তকারীরা ওই বাড়ি থেকে কোনও সুইসাইড নোট পাননি।
তাঁরা জানিয়েছেন, বাড়ির দরজা খোলা ছিল।
সেখান দিয়েই প্রতিবেশীরা ঝুলন্ত অবস্থায় ওই কিশোরীকে দেখতে পান। দেহটি
ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয় এম আর বাঙুর হাসপাতালে। প্রাথমিক তদন্তে
পুলিশের অনুমান, আত্মহত্যাই করেছে নীলাঞ্জনা।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নবম শ্রেণির
নীলাঞ্জনা পিসির বাড়িতেই থাকত। তার বাবা-মা, অর্থাৎ বিক্রম দাস এবং বনশ্রী
দাস থাকেন ইন্দ্রাণী পার্কে, দু’টি আলাদা ফ্ল্যাটে। নীলাঞ্জনার পিসি
দেবযানীর বছর দুয়েক আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে নীলাঞ্জনা পিসির সঙ্গেই
থাকত।
এ দিন বনশ্রীদেবী অভিযোগ করে বলেন, দামি
জিনিসের লোভ দেখিয়ে তাঁর মেয়েকে নিজের কাছে রাখতেন দেবযানী। মাঝেমধ্যে
মারধরও করতেন। এমনকী, মাস কয়েক আগে তাঁর মেয়ের সঙ্গে গ্যাস সিলিন্ডার
সরবরাহকারী এক কর্মী অশালীন আচরণ করার পরে সেই ঘটনা কাউকে না জানানোর
পরামর্শ দিয়েছিলেন দেবযানী। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
বনশ্রীদেবীর কথায়, ‘‘বাবার ভয়েই নীলাঞ্জনা
ওর পিসির বাড়িতে থাকত। কিন্তু মাঝেমধ্যেই ফোন করে আমাকে বলত, ওকে অনেক
অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে। আমি চলে আসতে বলতাম। কিন্তু ও ভয়ে কিছু করতে
পারেনি। তাই এমন চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’
যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ মৃতার বাবা।
বিক্রমবাবুর দাবি, মেয়ে কখনওই খারাপ আছে বলে তাঁদের জানায়নি। এমনকী, গ্যাস
সিলিন্ডার সরবরাহকারী যুবকের অশালীন আচরণের কথা জানার পরে তিনি মেয়েকে
বলেছিলেন, ইন্দ্রাণী পার্কের বাড়িতে চলে আসতে। কিন্তু নীলাঞ্জনা রাজি ছিল
না। সে জানিয়েছিল, তার কোনও সমস্যা হচ্ছে না।
দেবযানীর দাবি, ছোট থেকেই নীলাঞ্জনা তাঁর
কাছে থাকতে চাইত। তাঁর বিয়ের পরেও নিজের ইচ্ছাতেই সে পিসির কাছে ছিল।
পড়াশোনা নিয়ে তিনি যে নীলাঞ্জনাকে মাঝেমধ্যে বকাবকি করতেন, সে কথাও
জানিয়েছেন দেবযানী। এমনকী, বৃহস্পতিবার রাতে অফিস থেকে ফিরে তিনি দেখেন,
স্থানীয় একটি ছেলের সঙ্গে নীলাঞ্জনা গল্প করছে। দেবযানীর কথায়, ‘‘ওকে বকুনি
দিয়েছিলাম।
বলেছিলাম, পড়ার সময়ে ফাঁকা বাড়িতে কেন
এক জনের সঙ্গে গল্প করছে। কিন্তু সকালে ওকে দেখে কিছু বুঝিনি। স্বাভাবিক
ভাবেই কথা বলেছে। কেন এমন করল, বুঝতে পারছি না।’’
এক মোবাইল নেটওয়ার্কিং সংস্থার কর্মী
দেবযানী জানান, এ দিন সকালে নীলাঞ্জনাকে ঘুম থেকে তুলে তিনি অফিসে বেরিয়ে
যান। সেখানে পৌঁছে ভাইঝিকে বারবার ফোন করেন তিনি। কিন্তু ফোন বন্ধ ছিল।
কিছু ক্ষণ পরে এক প্রতিবেশীর নম্বরে ফোন করে নীলাঞ্জনার খোঁজ করেন তিনি।
তখন সেই প্রতিবেশী তাঁকে দ্রুত বাড়ি পৌঁছতে বলেন।
এ দিন বনশ্রীদেবীর অভিযোগ প্রসঙ্গে দেবযানী বলেন, ‘‘ওকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম না। এখন অনেক কিছু শুনতে হবে।’’
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নীলাঞ্জনার
ন’বছরের ভাই নীলাদ্রিও সপ্তাহান্তে পিসির বাড়ি চলে যেত। এ দিন নীলাদ্রি
জানায়, পিসি এবং দিদির সঙ্গে বড়দিন কাটাতে সে হরিদেবপুর গিয়েছিল। ২৫ তারিখ
পিসি এবং পিসেমশাই তাদের নিয়ে এসপ্ল্যানেড এবং চায়না টাউনে গিয়েছিলেন।
পরের দিনও দিদি স্বাভাবিক ছিল বলেই জানায় নীলাদ্রি।
তার কথায়, ‘‘পড়াশোনা না করলে পিসি
মাঝেমধ্যে আমাদের বকুনি দেয়। সেই কারণেই দিদির মন খারাপ ছিল কি না, জানি
না। ও আমায় কিছু বলেনি। আমার কিন্তু পিসির বা়ড়ি যেতে খুব ভাল লাগে।’’
No comments:
Post a Comment