আমাদের
দেশের শ্রেষ্ট সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা। তেমনই একজন জাতীয় শ্রেষ্ঠসন্তান,
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা
সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য (তথ্য ও গবেষনা
বিষয়ক) এবং ময়মনসিংহের মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মাহবুবুল
হক চিশতী (বাবুল চিশতী)’র বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে বির্তকিত করার অসৎ
উদ্দেশ্যে আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলন ব্যর্থ হয়ে তা ভুন্ডুল হয়ে গেছে।
পরবর্তিতে ঐ সংবাদ সম্মেলনটি গণশুনানিতে
পরিণত হয়। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অমুক্তিযোদ্ধাদের নাম এনে
কর্তব্য পালনে অবহেলা, উদাসীনতা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করে
সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন বিএনপি-জামায়াত পন্থি একদল মুক্তিযোদ্ধা। গতকাল
সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব ভিআইপি লাউঞ্জে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান
জামালপুরের বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মোঃ সিরাজুল হক। এসময় উপস্থিত ছিলেন
লেঃ কর্নেল (অবঃ) এসআইএম নুরুন্নবী খান বীর বিক্রম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ
জাফরউল্যাহ চৌধুরী (প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র), বীর
মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর (সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল বাংলাদেশ
মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল) ও মিজানুর রহমান বীর প্রতীক।
৭১’এর রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা জামালপুর ও শেরপুর জেলার ব্যানারে এই
সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়
মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা চূড়ান্ত করার পূর্বে ভাতা, কোটা সুবিধা ও
অন্যান্য কিছু সুবিধা প্রবর্তন করা হলে স্বার্থান্বেষী অমুক্তিযোদ্ধারা
অবৈধ পন্থায় সনদ সংগ্রহে তৎপর হয়ে উঠে। আরও বলা হয়, সরকারের ভুল
স্বিদ্ধান্তের কারণে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাময়িক সনদ প্রদানের ভুল
প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার কারণে পাতানো স্বাক্ষীর স্বাক্ষর ও তদবিরকৃত
উপজেলা, জেলা কমান্ডার এর সুপারিশ সম্বলিত আবেদন পত্রের ভিত্তিতে সকল
স্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ও মুক্তিযুদ্ধ
বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে সনদ পত্র
প্রদানের হার কেবলই বাড়তে থাকে। সাংবাদিক সম্মলনে বলা হয়, সাম্প্রতিক কালে
বর্তমান সরকারের অর্ধ ডজন অমুক্তিযোদ্ধা সচিব লজ্জার মাথা খেয়ে সনদ বগলদাবা
করে নিতে প্রায়শ পান। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করা শেষে
বকশীগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয়
কমান্ড-এর সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য (তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক) এবং ময়মনসিংহের
মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী)
সম্পর্কে বানোয়াট ও মনগড়া একটি লিখিত বক্তব্য সাংবাদিকদের না শুনিয়ে গোপনে
তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়।
এতে লেখা ছিল বাবুল চিশতী একজন
যুদ্ধাপরাধী ও অমুক্তিযোদ্ধা। লিখিত বক্তব্য উল্লেখ ছিল শেরপুর জেলার
ঝিনাইগাতী উপজেলার নাচনমহুরী গ্রামের মোখলেসুর রহমান চেয়ারম্যানকে
মুক্তিযোদ্ধার পিতা হওয়ার কারণে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে বকশীগঞ্জ বাজারের
গোহাটায় গাছের সাথে দুই হাতে পেরেক এঁটে মাইকিং করে লোক জড়ো করে শত শত
প্রত্যক্ষদর্শীর সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে নিজে গুলি করে হত্যা করেছে। তার
ছেলে মুক্তিযোদ্ধা সাইফুলকেও ধরে নিয়ে গিয়ে পাক বাহিনীর হাতে তুলে দেয়।
সাইফুলকেও নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়াও আরো একাধিক মামলায় হত্যা ও
অপরাধের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা পড়ে আছে। এই লিখিত অভিযোগ হাতে পাওয়ার পর
উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিপুল হট্টগোল বেধে যায়। এক পর্যায়ে
সাংবাদিক সম্মেলনটি গণশুনানিতে পরিণত হয়।
সরকারি মুক্তিযোদ্ধা সংস্থাগুলোকে
ঢালাওভাবে মিথ্যাচার সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মোঃ
সিরাজুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রথম সরকারের সর্বপ্রথম কর্তব্য
ছিলো মুক্তিযুদ্ধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
প্রনোয়ন, ঐতিহাসিক সমুদয় বিষয়বলি সংগ্রহ ও সংরক্ষন, মুক্তিযোদ্ধাদের
প্রোফাইল সংগ্রহ ও সংরক্ষন, সঠিক ও চূড়ান্ত তালিকা সরকারিভাবে প্রকাশ করণ,
মুক্তিযোদ্ধাদের স্থায়ী সনদ ও আইডি প্রদান, তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইন
প্রনয়ন করে তাদের মর্যদা, স্বীকৃতি ও প্রাপ্য সমূহ নির্ধারণ করা।
অনুরূপভাবে যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের
তালিকা তৈরী ও বিচার কাজ সম্পন্ন করা। বকশীগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ডের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য (তথ্য ও
গবেষনা বিষয়ক) এবং ময়মনসিংহের মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাস্টের চেয়ারম্যান
মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) সম্পর্কে সাংবাদিক মৃত মোখলেসুর রহমান ও
তার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা সাইফুলকে নির্মমভাবে হত্যা সম্পর্কে মৃতের বর্তমান
জীবিত আরেক ছেলে হামিদুল ইসলাম বলেন আমি চক্রান্তের শিকার হয়ে বাবুল চিশতীর
নামে মামলা করেছি।
হানিফ তালুকদার ও মান্নান নামে দু’জন
লোকের মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে আমি এই মামলা করেছি। পরবর্তীতে মামলা তুলে নেওয়া
হয়েছে। তাহলে আপনার বাবা ও ভাইকে কারা হত্যা করেছে বলে সন্দেহ করছেন?
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সে বলেন, পাকিস্তানি মিলিটারীরা আমার বাবা ও
ভাইকে হত্যা করেছে। বাবুল চিশতী অমুক্তিযোদ্ধা বলে সাংবাদিক সম্মেলনে যে
অভিযোগ তোলা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট এবং
উদ্দেশ্য প্রণোদিত উল্লেখ করে বকশীগঞ্জের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা
মফিজউদ্দিন, সাবেক জেলা ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম
মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন এবং মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর আফসার উদ্দিন বলেন,
বকশীগঞ্জের তিনশত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল
চিশতী), একজন অন্যতম।
আমরা একসাথে থেকে একই কমান্ডে
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছি। সাংবাদিক সম্মেলনে বাবুল চিশতীকে
অমুক্তিযোদ্ধা বলা সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত এবং ক্ষমার অযোগ্য। আমার এই মিথ্যা ও
বানোয়াট অপবাদের বিচার চাই। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড
কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ সালাহউদ্দিন সবশেষে মাইক হাতে নিয়ে বলেন,
বাবুল চিশতীকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে চিনি ও জানি। তার সম্পর্কে অবাঞ্চিত
মিথ্যা অপবাদ দেওয়ায় সকল প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সুনাম ক্ষুণœ হয়েছে বলে
অমি মনে করি।
সূত্র: কারেন্টনিউজ ডটকমডটবিডি




No comments:
Post a Comment