আমার বাঁশখালী ডেক্স:
বিজয় মেলার নামে কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারী পার্ক গেইটে লটারীর নামে জুয়া, সার্কাসের নামে উলঙ্গ নৃত্যের মহোৎসব চলছে। এতে স্থানীয় শিক্ষার্থীসহ সাধারণ লোকজন প্রতিরাতেই বিজয় মেলার জুয়া ও অশ¬ীল নৃত্যে অংশ গ্রহন করতে গিয়ে ফতুর হয়ে যাচ্ছে। পাড়ায়-পাড়ায় চুরি-চামারী ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে দিনদিন।
জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বিজয় মেলার অনুমতি নিয়ে এসব কুকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকার সচেতন মহল। গত ১ সপ্তাহ ধরে ডুলাহাজারায় চলছে মেলার নামে রঙখেলা।
এতে উঠতি বয়সের সব স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী ও গ্রাম্য যুবকসহ দূর-দূরান্তের বিকৃত মানসিকতার মানুষের উপচেপড়া ভীড় মোহিত করে রেখেছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও প্রবেশধারে এধরণের বিজয় মেলা দেখে বিরক্ত প্রকাশ করে ফিরেছে।
গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে উপজেলার ডুলাহাজারস্থ বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কের পাশে বিজয় মেলার আয়োজন করে। এখানে প্রতিদিন লটারীর নামে পুরো চকরিয়ায় মাইকিং করে ২০ টাকা টিকেট বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পক্ষান্তরে নামে মাত্র পুরস্কার দিচ্ছে বিজয়ীদের মাঝে।
এছাড়া রাত ৯টার পর থেকে সার্কাসের নামে রাত ব্যাপি চলে অখ্যাত শিল্পীদের উলঙ্গ নৃত্য। তবে জেলা প্রশাসনের দেয়া শর্তগুলো মানছেনা আয়োজকেরা। এরপরও স্থানীয় প্রশাসন এসব দেখেও রহস্যজনক কারণে না দেখার ভান করে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আয়োজকদের দাবী, শুধু বিজয় মেলা করলে এখানে কোন দর্শক আসবে না। তাই দর্শনার্থীদের বিনোদনের সার্থে টুকটাক নৃত্যের আয়োজন করতে হচ্ছে। এছাড়া বিজয় মেলার ব্যয় ও এসব মেলার কাছে ব্যয় করা পঁজি উদ্ধার করতে র্যাফেল ড্রয়ের নামে জুয়ার আসর বসাতে হয়েছে। এ খাতে আয়ের বিশাল একটি অংশ সকল স্থরের দায়িত্বশীলদের ঘাটে ঘাটে বিলি করতে হয়েছে। এমনকি এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের খবর প্রচার ও প্রকাশ না করার জন্যে মিডিয়া কর্মীদেরকেও ম্যানেজ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ক’দিন পরেই এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার অনুষ্টিত হবে। বিজয় মেলা উপলক্ষ্যে আয়োজিত এসব অশ¬ীল কর্মকান্ডে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্ক সংলগ্ন এলাকার লোকজন জানান, মেলায় অশ¬ীল নৃত্য ও জুয়া এবং মেলার মাইকের বিকট শব্দ দুষণে অতিষ্ট জনগোষ্টি রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেনা। এছাড়াও পার্ক এলাকায় গড়ে উঠা গেষ্ট হাউস গুলোতে চলছে পতিতা বানিজ্য। উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তার শাহেদুল ইসলাম ও পুলিশের বিরামহীন অভিযানের পর গেষ্ট হাউস গুলোতে অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে গেলেও বিজয় মেলাকে কেন্দ্র করে পুনরায় এসব অপকর্ম চলছে বিনা বাধায়। স্থানীয় লোকজন অতিষ্ট হয়ে উঠলেও বিজয় মেলার নাম জড়িত থাকায় মামলার ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়নের প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, মৌসুমী পাখীদের কারণে দলের ভাবমুর্তি কোথায় গিয়ে দাড়াচ্ছে তা দলের বর্তমান কান্ডারীরা দেখেও দেখছে না। অথচ এসব অপকর্মের অর্থ যোগান দিতে গিয়ে উঠতি বয়সের যুব সমাজ চুরি-চামারীসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে।
তবে মেলার কয়েকজন আয়োজকদের দাবি, উপজেলার বিভিন্ন স্থরে চাঁদা দিয়ে মেলা চালানো হচ্ছে। তবে নগ্ন নৃত্য ও জুয়া খেলা চালানোর বিষয়টি সকল আয়োজক অস্বীকার করেছেন।
বিজয় মেলার নামে নগ্ন নৃত্য এলাকার বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন ব্যক্তি জানান, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাসে বিজয় মেলার নামে সেখানে অশ্লীলতা ও অপরাধ কার্যক্রম চলছে। তা বন্ধ করতে হবে। না হলে দেশের বিজয় অর্জন ম্লান হবে। বদনাম হবে সূর্য সন্তানদের।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ইতিপূর্বে ডুলাহাজারার বিজয় মেলায় প্রকাশ্যে জুয়া চলছে এমন সংবাদ পেয়ে আমি নিজেই পরির্দশন করে একটি জুয়ার আসর ভেঙে দিয়েছি। আয়োজকদের নির্দেশ দিয়েছি জুয়া ও অসামাজিক কোনো কার্যকালাপ না চালানোর জন্য। তিনি আরও বলেন, এরপরও অসামাজিক কোনো কার্যকলাপ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও চকরিয়া থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি।
No comments:
Post a Comment