অবাধ যৌনাচার ও প্রতারণার মাধ্যম ‘বিগো লাইভ’, রোধে নেই ব্যবস্থা
আমার বাঁশখালী ডেক্স:গভীর রাত হয়ে যাওয়ায় পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারলে কী হবে, বাংলায় কথা বলার জন্য মতিন ঠিকই একটি মাধ্যম খুঁজে বের করেছেন। বন্ধুদের কাছ থেকে জেনেছেন বিগো লাইভ নামে একটি অ্যাপস আছে যেখানে সারারাত ধরে টেক্সট ও ভিডিও চ্যাট করা যায়।
বন্ধুর কাছ থেকে এমন তথ্য জানার পর ‘বিগু লাইভ’ ইনস্টল করে ব্যবহার করতে শুরু করেন তিনি। কয়েকদিনের মধ্যে আলাপ হয় নাদিয়ার (ছদ্মনাম) সঙ্গে। তিনি ঢাকায় থাকেন বলে পরিচয় দিয়ে তার কাছ থেকে প্রথমে ইমো নম্বর নিয়ে সেখানে কয়েকদিন ভিডিও চ্যাট করেন। এক সময়ে নিজেদের মধ্যে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেন তারা। তবে এগুলোই যে কাল হয়ে দাঁড়াবে তা বুঝতে পারেননি মতিন। কিছুদিন পর নাদিয়া তাকে ব্ল্যাকমেইল শুরু করেন। প্রথমে ২০ হাজার দাবি করে বলেন, না দিলে ওই নগ্ন ভিডিও তিনি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবেন। বাধ্য হয়ে মতিন তাকে ২০ হাজার টাকা দেয়ার মাসখানেক পর আবার তার কাছে দাবি করা হয় ৫০ হাজার টাকা। বাধ্য হয়ে এবারও তিনি টাকা দিয়ে দেন নাদিয়াকে।
কুমিল্লার বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী সম্রাটের সঙ্গেও ঘটেছে একই ধরনের ঘটনা। তবে শুধুমাত্র প্রবাসীরাই নন। এই অ্যাপসের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন দেশের অনেক তরুণ-তরুণী। সোবাহান নামের এক তরুণও জানিয়েছেন একইভাবে প্রতারিত হওয়ার গল্প। তবে বিষয়টি ‘লজ্জা’র হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী কিংবা অন্য কারও সহায়তা নিতে যাননি তিনি।
অ্যাপসটির কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়, এটি ব্যবহার করে একই সঙ্গে টেক্সট ও ভিডিও চ্যাট করা যায়। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে একটি বোর্ডে (ভিডিও চ্যাটে) যুক্ত হতে পারেন আটজন পর্যন্ত। তারা একই সঙ্গে নিজেদের দেখতে ও শুনতে পারেন। এছাড়া তাদের চ্যাটিং (ভিডিও) দেখতে পারেন একাউন্টধারী যেকেউ।
দেশে এই অ্যাপসটির ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অশ্লীল গল্প, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা হয় এখানে। অনেকেই খুঁজতে থাকেন প্রতারণা সুযোগ। কেউ ফাঁদে পা দিলেই তার সর্বস্ব লুটে নেয়ার উপায়ও তাদের জানা রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে উপদেশমূলক বক্তব্যও প্রচার করা হয় এখানে।
শুধুমাত্র সময় কাটানো কিংবা আগ্রহের বসে অ্যাপসটি ইনস্টল করে প্রতারিত হবার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এ অবস্থায় প্রতারিতরা অ্যাপসটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। অ্যাপসটি বন্ধে দরকারি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অ্যাপসটি মূলত কারা ব্যবহার করেন এমন বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, মূলত উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী, প্রবাসী, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে একাকীত্ব অনুভব করা এবং যে সমস্ত নারী বাড়িতে একা অবস্থান করেন তাদের মধ্যেই অ্যাপসটি ব্যবহারের প্রবণতা বেশি।
শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই এগুলো বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন তথ্য প্রযুক্তিবিদ সালাউদ্দিন সেলিম। তিনি বলেন, প্রযুক্তির ভালো দিকগুলোকে বাদ দিয়ে অনেক সময়ই খারাপ দিকগুলোকে গ্রহণ করেন অনেকে। শুধুমাত্র এই অ্যাপস নয়, এ ধরনের অনেক অ্যাপস ব্যবহার করে প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। যেহেতু এই অ্যাপসটি দিয়ে প্রতারণার ঘটনা বেশি ঘটছে তাই বিটিআরসি চাইলেই এটি বন্ধ করে দিতে পারে।
অ্যাপস ব্যবহার করে এ ধরনের প্রতারণার ঘটনায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের(বিটিআরসি) পক্ষ থেকে খুব কম কিছুই করার থাকে বলে মনে করেন বিটিআরসি’র সচিব মো. সরওয়ার আলম।
তিনি সময় নিউজকে বলেন, গুগল অ্যাপস স্টোরে হাজারো অ্যাপস রয়েছে। এগুলোকে ভালো-মন্দ দু’ভাবেই ব্যবহার করা যায়। কে কোন অ্যাপসটিকে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন বা কেউ এটি দ্বারা প্রতারিত হচ্ছেন কিনা সেটা আমাদের জানার কথা নয়। আইন-শৃঙ্খলারক্ষী বাহিনীর প্রত্যেকেরই সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। তারাই এগুলো বেশি দেখাশুনা করে। কেউ অভিযোগ করলে আমরা আইজিডব্লিউ’কে বলে সেটি বন্ধের ব্যবস্থা করি।
তবে এই অ্যাপসটি ব্যবহার করে যেহেতু অনৈতিক কাজ ও প্রতারণার ঘটনা ঘটছে সেহেতু বিষয়টি খতিয়ে দেখে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অ্যাপসটির বিরুদ্ধে যেহেতু অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান।
সূত্র: কারেন্টনিউজ ডটকমডটবিডি
 

 
 

 
 
 
 
 
 
 
 


No comments:
Post a Comment