আমার বাঁশখালী ডেক্স:
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য যে অর্থ
প্রয়োজন, আগামী ১০ মাসে তা যোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করেছে
জাতিসংঘ। এদিকে গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের দেওয়া মানবিক
সহায়তা কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এবার মার্চ মাস থেকে নতুন করে ৯৫০ মিলিয়ন ডলার
সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হবে ত্রাণ সংগ্রহকারী দলকে, এমনটাই মনে করছেন
জাতিসংঘের এক ঊর্ধতন কর্মকর্তা।
ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী
মিয়া সিপ্পো বিবিসিকে বলেছেন, ‘যে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালু ছিল সেটি
ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে। এবার ৯৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থ সংগ্রহ করতে হিমশিম
পোহাতে হবে জাতিসংঘের ত্রাণ সংগ্রহকারী দলকে। নতুন এ যৌথ পরিকল্পনা চলতি
বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। আমার মনে হয়, নতুন অর্থ জোগাড় করা
চ্যালেঞ্জিং হবে’
বাংলাদেশের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে
আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য আগামী ১০ মাসে ৯৫০ মিলিয়ন ডলার
অর্থাৎ প্রায় ৮০০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে
থেকে এই অর্থ জোগাড়ের আশায় জাতিসংঘ চলতি সপ্তাহেই জেনেভাতে একটি বৈঠক
ডেকেছে। এদিকে কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন অর্থ সহায়তার মধ্যে স্থানীয়
বাংলাদেশীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাদের জীবিকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের
কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত বছর অগাস্ট মাসের শেষদিকে রোহিঙ্গা
সঙ্কট শুরুর পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ছয় মাসের সাহায্যের
প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল। বিশেষ করে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি শরণার্থীদের
মধ্যে খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে সেটির মেয়াদ শেষ
হয়েছে। খাদ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অন্যান্য সহায়তাও
দিয়ে আসছিল। কিন্তু এখন নতুন করে আরও অর্থ প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় ৮০০০
কোটি টাকার ২৫% খরচ হবে স্থানীয় বাংলাদেশীদের জন্য, যাদের বসবাস শরণার্থী
ক্যাম্পের আশপাশে।
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন,
রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় ৩.৫ লাখ স্থানীয় বাংলাদেশীর জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলছেন,
রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় বাংলাদেশীদের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার
বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও অনুধাবন করেছে।
কর্মকর্তারা জানান, ৯৫০ মিলিয়ন ডলারের
একটি বড় অংশ ব্যয় হবে খাদ্য সহায়তার জন্য। বাকি অংশ স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ
আরও কয়েকটি খাতে ব্যয় করা হবে। বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের
কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশী মিলিয়ে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের
সহায়তার জন্য তারা এই হিসেবে করেছেন। রোহিঙ্গা সংকটের ছয় মাস পার হলেও
এটি সমাধানের আশু কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় রোহিঙ্গাদের
সহায়তার জন্য অর্থ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ কতদিন টিকে থাকবে?
এমন প্রশ্নে জাতিসংঘ কর্মকর্তা মিয়া
সিপ্পো বলেন, "আমার মনে হয় জাতিসংঘ নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে তাদের ভূমিকা রেখে
আসছে। বাংলাদেশ সরকারও এ সংকটের বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে
এনেছে। বিষয়টি আমাদের ধরে রাখতে হবে। যাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ে ভুলে না যায়
যে কক্সবাজারে কী ঘটছে। গত অগাস্ট মাসে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল যখন শুরু
হয়েছিল তখন বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে যেসব ত্রাণ আসছিল
সেটি এখন অনেকটাই কমে এসেছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন
হচ্ছে খাদ্য এবং চিকিৎসা সাহায্য। রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হবে বলেই
অনেকে আশংকা প্রকাশ করছে। এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে
দীর্ঘমেয়াদী সাহায্য না চেয়ে ১০ মাসের জন্য চাওয়া হচ্ছে কেন? শরণার্থী
প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলছেন, সেটি এখনো প্রয়োজন মনে করছে
না বাংলাদেশ।
মি. কালাম বলেন, আমরা যেহেতু মিয়ানমারের
সাথে প্রত্যাবাসন বিষয়ক একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছি, আমরা আশা করি যে
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। সে প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে দীর্ঘ
মেয়াদে প্রস্তুতি নেয়ার প্রশ্নটি এখনো ঠিক প্রাসঙ্গিক নয়। নতুন ও পুরনো
মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কতদিন
সহায়তা দিতে থাকবে সেটি নিয়েও নানা আশংকা আছে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য কেবলই আন্তর্জাতিক
গোষ্ঠীর উপর নির্ভার থাকতে পারছে না বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেছেন যে, আগামী বাজেটে
রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ বরাদ্ধ দেওয়া হবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
No comments:
Post a Comment