আমার বাঁশখালী.শাহ মুহাম্মদ শফিউল্লাহ,
বাঁশখালীর পুকুরিয়ার বাসিন্দা সাবের হোসেন (৫৭)। ডান হাত নেই, যে কারণে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। তাই ১৮ বছরের তরুণ অবস্থা থেকেই ভিক্ষাবৃত্তির সাথে জড়িত। ভিক্ষার টাকা দিয়ে স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ের সংসার চালিয়ে আসছিলেন। দুই মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন। কষ্টের জীবনে ভিক্ষাবৃত্তি করেই সব সামলেছেন। এবার সরকারের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়তে চান তিনি। মোক্ষম সুযোগটি পেয়েই সাথে সাথে রাজিও হয়েছেন। পেয়েছেন একটি ভ্যানগাড়ি। আর্থিক দৈন্যদশায় দুঃখ-কষ্টে দিন কাটানো সাবের হোসেনদের কাছ থেকে দারিদ্র্যকে দূরে রাখতে পাশে দাঁড়িয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুজিবুর রহমান সিআইপি। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাঁশখালীর ৫০ ভিক্ষুকের হাতে ভ্যানগাড়ি তুলে দিলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ‘ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠনে প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এসেছেন। বাঁশখালীর ভ্যানগাড়ি পাওয়া ৫০ জনের মধ্যে ১০ জন রয়েছেন নারী ভিক্ষুক। অনেকেই ভ্যানগাড়ি চালানোর উপযুক্ত না হলেও তাদের পরিবারের যাতে কেউ চালিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারে সে জন্য এসব গাড়ি প্রদান করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
গতকাল অনুষ্ঠিত ভ্যানগাড়ি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। ভিশন বাস্তবায়ন ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠনে সরকার ভিক্ষুকমুক্ত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ উদ্যোগ নিয়েছেন। ভিক্ষুকদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জোর দেয়া হয়েছে। যে কারণে আজকে ৫০ জন ভিক্ষুকের হাতে ভ্যানগাড়ি তুলে দেয়া হচ্ছে। আর এ কাজে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্মার্ট গ্রুপের এমডি মুজিবুর রহমান সিআইপি। তিনি বলেন,এমনিতেই পিছিয়ে পড়া জনপদ বাঁশখালী। সে অবহেলিত বাঁশখালীকে এগিয়ে নিতে মুজিবুর রহমান সিআইপি ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনে যে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তা সত্যিই অনুকরণীয়। স্মার্ট গ্রুপের মুজিবুর রহমান সিআইপি বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই প্রধানমন্ত্রীর ভিশন বাস্তবায়নে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। বাঁশখালীতে যেসব ভিক্ষুক রয়েছে সবাইকে প্রশাসনের মাধ্যমে আমি পুনর্বাসন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে প্রথম ধাপে ৫০ জনকে ভ্যানগাড়ি প্রদান করেছিলাম। এবার ৫০ জনের হাতে ভ্যানগাড়ি তুলে দিয়েছি। বাকিদেরকেও পর্যায়ক্রমে সহযোগিতা করা হবে। আমি চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে বাঁশখালীকে সবার আগে ভিক্ষুকমুক্ত করতে চাই। বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী বলেন, বাঁশখালীতে শিক্ষাবিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবার। বাঁশখালীর প্রায় ২০ হাজার মানুষ তাঁদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে নিজেদের পরিবার চালায়। এবার ভ্যানগাড়ি দিয়ে ভিক্ষুকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সমাজের দারিদ্র্য তাড়াতে উনাদের পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হাবিবুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. মাশহুদুল কবির, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন, বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান মোল্লা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু সৈয়দ চৌধুরী, পৌরসভার প্যানেল মেয়র দেলোয়ার হোসেন, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
No comments:
Post a Comment