একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, আ’লীগে নতুন ও তরুণদের ছড়াছড়ি - আমার বাঁশখালী ডটকম AmarBanskhali.Com

ব্রেকিং নিউজ

শীর্ষ বিজ্ঞাপন

নিউজ এর উপরে বিজ্ঞাপন

Thursday, March 8, 2018

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, আ’লীগে নতুন ও তরুণদের ছড়াছড়ি


আমার বাঁশখালী ডেক্স:
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের তালিকায় উঠে এসেছে নতুন ও তরুণদের নাম। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও চাচ্ছেন তরুণরা এগিয়ে আসুক রাজনীতির মূল ধারায় এবং পরবর্তী রাজনীতির হাল ধরুক। পরবর্তী রাজনীতির কথা চিন্তা করেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী তালিকায় নতুন ও তরুণদের স্থান দিতে চাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। সেই তরুণ নেতৃবৃন্দর মধ্যে বেশির ভাগই সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও বর্তমান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম রয়েছে।

ইতোমধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় মাঠপর্যায়ে তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। নিজ নিজ সংসদীয় আসনের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং জনপ্রিয়তা অর্জনে তারা এলাকায় যাচ্ছেন, গণসংযোগ করছেন। বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে মনোনয়নপ্রত্যাশী নতুন ও তরুণদের নজর এখন এলাকার দিকে।
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী এই নেতাদের অনেকে এলাকায় ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। মনোনয়নের দৌড়ে পুরনো প্রার্থীদের সামনে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছেন তারা। তাদের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা যেমন রয়েছেন তেমনি আছেন ছাত্রলীগ কিংবা অঙ্গ সংগঠনের নেতাও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রায় ১২০ থেকে ১৩০জন প্রার্থীর পরির্বতন হবে। এই আসনগুলোতে তরুণদের স্থান দেওয়া হবে। বয়স্ক প্রার্থীদের নাম বার বার আসলেও এবার আগামী রাজনীতির নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য তরুণদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে। এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশেষ পরিস্থিতিতে হওয়ায় ওই সময়ে ৫০টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হয় কিন্তু এবার প্রায় ১০০ এর বেশী আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে এবং তা হবে।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলেন, বয়সের কারণে যারা বিভিন্ন রোগ-শোকে ভূগছেন তারাও এবার দলের মনোনয়ন পাবেন না। এছাড়াও যে সকল সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাদের পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত তরুণদের দল মনোনয়ন দেবে।
মনোনয়ন প্রত্যাশী এসব আলোচিত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোনা-৩), আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, সচিব আব্দুল মালেক (পটুয়াখালী-১), সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম (শরীয়তপুর-২), কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী (লক্ষ্মীপুর-৪) ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী (চাঁদপুর-৩), উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম (চট্টগ্রাম-১৫), কক্সবাজার ৩ আসনে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয়, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাওছার (নরসিংদী-৫), নেত্রকোনা-৫ আসন থেকে আাওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ। কুমিল্লা-৫ আসনে আলোচনায় রয়েছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ‘৭১-এর ঢাকা বিভাগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যরিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী।
আলোচিত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি (জামালপুর-৫), নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, হাসান আলী (সিরাজগঞ্জ-১), হাবিবুর রহমান স্বপন, চয়ন ইসলাম (সিরাজগঞ্জ-৫)। গাইবান্ধার-৫ সাঘাটা ফুলছড়িতে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন।
পটুয়াখালী-বাউফল (২) আসনটিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জোবাইদুল হক রাসেল। চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আমিরুল আলম মিলন এবং ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ (বাগেরহাট-৪), নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এ এইচ এম মাসুদ দুলাল, ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান, মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রোজিনা নাসরীন (বরগুনা-১), কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি (নাটোর-৪)।
নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান দিপু (নারায়ণগঞ্জ-৫), ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের সাবেক ভিপি সাজ্জাদ হোসেন শাহীন (ময়মনসিংহ-৪)। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারী (শরীয়তপুর-৩)। ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর মাগুরা-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বরিশাল-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহে আলম। সাবেক সভাপতি মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না পিরোজপুর-২ আসনের নৌকার টিকিট প্রত্যাশী। পিরোজপুর-১ আসনে আলোচিত হয়ে উঠেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা। পটুয়াখালী-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক আলী আশরাফ।
নিজাম উদ্দিন জন নওগাঁ-৫ আসনে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নড়াইল-১ আসন বা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নারী সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী, মনিরুজ্জামান মনির (ঝালকাঠি-১), শফি আহমেদ (নেত্রকোণা-৪), অজয় কর খোকন কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। একই আসনে মনোনয়ন চান ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুল হক রানাও।
ঢাকার আসনগুলোতে নতুনদের মধ্যে আলোচিত মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন মনিরুজ্জামান তরুণ (ঢাকা-১),আওলাদ হোসেন (ঢাকা-৪), স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের বড় ছেলে সোলায়মান সেলিম (ঢাকা-৭), আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, যুবলীগের ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট (ঢাকা-৮), সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন (ঢাকা-১৪), যুবলীগের মঈনুল হোসেন খান নিখিল, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু (ঢাকা-১৫)।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যেকোনো একটি আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। আর ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা-১৩ আসনে। এ ছাড়া আলোচনায় আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু (রাজবাড়ী-২), নারী সংসদ সদস্য নূরজাহান বেগম মুক্তা (চাঁদপুর-৫),মহিলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী ও জহিরউদ্দীন মাহমুদ লিপটন (ফেনী-৩)।
সাবেক ছাত্রনেতা ও মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান (পিরোজপুর-৩), নারী সংসদ সদস্য সেলিনা আক্তার লিটা, এমদাদুল হক (ঠাকুরগাঁও-৩), জামালপুরের ইসলামপুর থেকে নারী সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদ, ময়মনসিংহ-৮ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ইশ্বরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমন।
এ ছাড়া বিশ্বনাথ সরকার বিটু (রংপুর-২), সাফিয়া রহমান (রংপুর-৩), রাশেক রহমান, জাকির হোসেন সরকার (রংপুর-৫), কামাল আহমেদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট মমতাজ (নীলফামারী-২) মাজহারুল হক প্রধান, আনোয়ার সাদাত সম্রাট (পঞ্চগড়-১), আব্দুল মালেক চিশতি (পঞ্চগড়-২) মনোনয়নের লড়াইয়ে আছেন।
কুড়িগ্রাম-৪ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও রৌমারি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। তিনি মাঠ পর্যায়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করে ইতোমধ্যে এলাকার ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এ আসনে অন্য প্রার্থীদের তেমন একটা মাঠে দেখা যায় না বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানান, আমাদের কুড়িগ্রাম-৪ আসনে যত প্রার্থী রয়েছে তাদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম তরুণ, সৎ ও দক্ষ রাজনৈতিক কর্মী। তিনি সব সময় এলাকার মানুষের খোঁজ-খবর নেন। আগামী নির্বাচনে তাকেই আমরা কুড়িগ্রাম-৪ আসনের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাই।
নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, এলাকার জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে চাই সব সময়ই। দলের হয়েই জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে অংশ নেব।
মনিরুজ্জামান মনির বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমি এলাকায় কাজ করছি। মানুষের সুখে-দুঃখে সব সময়ই থাকি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম। ২০১৪ সালেও চেয়েছিলাম। কেন পাইনি সেটা আমার আজও জানা হলো না। আমার এলাকার সর্বস্তরের মানুষ এবং আমার এলাকার নেতা-কর্মীরা প্রত্যাশা করেছিল যে, আমি মনোনয়ন পাব। এবার আমি প্রত্যাশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।
বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, দলের জন্য আমি কাজ করছি। দল যদি ভালো মনে করে তাহলে আমাকে মনোনয়ন দেবে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার জন্যই আমি কাজ করব।
এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাউসার বলেন, এলাকার প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িত রাখার চেষ্টা করেছি। আমার নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি জায়গায় আমার পদচারণা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি সম্পর্ক রয়েছে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে। তরুণদের এগিয়ে নিতেই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাই।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, এলাকায় জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা ও দলের প্রতি যাদের আনুগত্য রয়েছে তাদেরই আগামীতে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, প্রতিবারই ৮০ থেকে ১০০ জন নতুন প্রার্থীকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। বিগত জাতীয় নির্বাচনে সেটা ৫০ জনেরও অধিক ছিল। এবার তা আরও বাড়বে। নতুন এ প্রার্থীদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত তরুণদেরই প্রাধান্য দেয়া হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, কিছু সংসদ সদস্য রয়েছেন, তাঁরা কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন কিন্তু এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে তেমন সম্পর্ক নেই। সেখানে আমাদের সাংগঠনিক অবস্থান মজবুত হলেও প্রার্থী পরিবর্তন হবে।

No comments:

Post a Comment

পোস্টের নীচে বিজ্ঞাপন