বাঁশখালীর প্রধান সড়কে যাত্রী পরিবহণকারী বাসের চালক ও হেলপারদের কাছে সাধারণ যাত্রীরা নিত্যদিন হয়রানির শিকার হয়ে আসলেও ভুক্তভোগী যাত্রীরা আইনি আশ্রয় না নেয়ায় সহসা পার পেয়ে যায় লাঞ্চনাকারী চালক হেলপাররা।
পরিবহণ সমিতির নেতাকর্মীদের হাতে বারবার সাধারণ যাত্রীরা হয়রানির শিকার হলেও এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিগত কয়েকমাস ধরে বাঁশখালীতে পরিবহণ শ্রমিকদের হাতে সাধারণ যাত্রীরা শারীরিকভাবে নাজেহাল হয়ে আসলেও প্রশাসনের গাফিলিতির কারণে বর্তমানে তা ব্যাপক আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে বাঁশখালী স্পেশাল সার্ভিসের চালক ও হেলপারদের হাতে নিত্যদিন শারীরিকভাবে নাজেহাল হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা।
এরই মধ্যে বাঁশখালী যানবাহন মালিক সমিতির ভাড়া নৈরাজ্য , লক্কর ঝক্কর মার্কা গাড়ির পরিবর্তে নতুন বাস সংযোগের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে একদল যুবক। তারা প্রতিনিয়ত যানবাহনের চালক ও হেলপারদের হাতে সাধারণ যাত্রী নাজেহাল হওয়ার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করছে। আর মূহুর্তের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র।
চালক ও হেলপারদের হাতে নির্যাতিতদের চিত্র প্রকাশ করে ভুক্তভোগীরা সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় তুললেও এব্যাপারে অবগত নন বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসন।
এ ব্যাপারে বাঁশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলে পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য।
বাঁশখালীর প্রধান সড়কে যাত্রী হয়রানি ও নাজেহালের প্রসঙ্গে জানতে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান মোল্লা বাঁশখালী প্রতিদিনকে জানান, যাত্রী হয়রানি ও নাজেহালের বিষয়ে এপর্যন্ত কেউ তার কাছে অভিযোগ করেনি। এব্যাপারে তিনি অবগত নন। এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, বাঁশখালীর প্রধান সড়কে কোন যাত্রী চালক কিংবা হেলপারদের হাতে নাজেহাল হওয়ার বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ করলে পরিবহন সমিতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই কর্মকর্তার মতে, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ না করার কারণে আমরা আইনি পদক্ষেপ নিতে পারছিনা।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন জানান, সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাত্রী হয়রানি ও নাজেহালের বিষয় নিয়ে সরব থাকলেও ভুক্তভোগীরা থানায় কোন অভিযোগ দেয়না। যার কারণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে পারছেনা প্রশাসন। তিনি আরও জানান, যেসব যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে , তারা যদি আমাদের কাছে অভিযোগ দেয় , তাহলে আমরা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেব। কিন্তু কেউ অভিযোগ দেয়না।
বাঁশখালী যাত্রী কল্যাণ ফোরামের সভাপতি ওয়াসিম মুন্না জানান, যুগ যুগ ধরে মালিক সমিতির কাছে জিম্মি বাঁশখালীর লাখো মানুষ। অতি নিম্ন মানের বাসে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি এ অঞ্চলের নৈমিত্তিক ব্যাপার হলেও কোন পক্ষই কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়না।
এর দীর্ঘসূত্রতার ফলশ্রুতিই ব্যাংকার কামালের উপর হামলা। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি একই সাথে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। বাঁশখালীর পরিবহণ মালিক সমিতির জিম্মি দশা থেকে বাঁশখালী বাসী মুক্তি চায়
পরিবহণ সমিতির চালক-হেলপারদের কাছে এভাবে যাত্রীরা হয়রানি ও নাজেহাল হয়ে আসল্ওে ভুক্তভোগী যাত্রীরা কোথাও অভিযোগ না করার কারণে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাসের চালক-হেলপাররা যাত্রীদের সাথে আরো বেশি বেপরোয়া আচারণ করছে। তারা যাত্রীদেরকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করতেও দ্বিধাবোধ করছেনা।
এদিকে গত রবিবার সকালে বাঁশখালীর গুণাগরিতে স্পেশাল বাসের হেলপারের কাছে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে এক ব্যাংক কর্মকর্তা। ব্যাংক কর্মকর্তা নাজেহাল হওয়ার দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও প্রশাসন ঐ ঘটনার সাথে জড়িত বাসের হেলপারকে আটক করতে পারেনি।
তবে হেলপারের হাতে নাজেহাল হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা মো: কামাল (৫০) গতকাল পর্যন্ত ঘটনার প্রতিকার চেয়ে কোথাও অভিযোগ করেনি। যার কারণে প্রশাসন নাজেহালকারী হেলপারকে আটক কিংবা তাঁর বির”দ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
ঘটনার শিকার ব্যাংক কর্মকর্তা মোঃ কামাল (৫০) জানান, তিনি অভিযোগ লিখেছেন। তবে পরিবহন সমিতির নেতারা তাঁকে সারাক্ষণ নজরবন্দী করে রাখার কারণে তিনি এখনো অভিযোগ দাখিল করতে পারেনি। তিনি বাঁশখালী প্রতিদিনকে জানান, শারীরিকভাবে লাঞ্ছনাকারী হেলপারের বির”দ্ধে তিনি অভিযোগ দাখিল করবেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম- কক্সবাজারের বিকল্প প্রধান সড়ক আনোয়ারা, বাঁশখালী, চকরিয়া উপজেলার একমাত্র সড়কে প্রতিনিয়ত বাস হেলপারদের হাতে দুর্ব্যবহার ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারন মানুষ । প্রধান সড়কে চলাচলকারী বাস ও সিএনজি অটোরিক্সার অতিরিক্ত ভাড়া লাগামহীন অবস্থায় পৌঁছেছে । বাস ও সিএনজি অটোরিক্সা ভাড়া নির্ধারণ করলেও কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে খেয়াল-খুশিমত ভাড়া আদায় করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এমন কি বাস ও অটোরিক্সা চালকদের সাথে অনেক যাত্রীর হাতা-হাতির ঘটনাও ঘটছে। আর অসহায় যাত্রীরা হয়ে পড়েছেন জিম্মি। ভাড়া-নৈরাজ্য চরমে পৌঁছেছে। সরকারিভাবে কি:মি: হিসেবে নির্ধারণ করলেও আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে বাসের চালক হেলপাররা।
বাসের চালক ও হেলপারদের কাছে সাধারণ যাত্রীরা হয়রানি ও শারীরিকভাবে নাজেহাল হয়ে আসলেও প্রশাসন এসব ঘটনার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় সড়কে চলাচলকারী সকল যাত্রী ও সাধারণ মানুষদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।





No comments:
Post a Comment