আল কুরআন শুধু মুসলমান নয়, সর্বকালের সমগ্র মানবতার জন্য বিশ্ব জাহানের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে সর্বোত্তম হাদিয়া। আর এটি মাহে রমজানেরও অনন্য অনুগ্রহ। মানবজাতির সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি যত বই–পুস্তক শাস্ত্রের অস্তিত্ব পাওয়া যায় তন্মধ্যে কুরআনুল কারিম যুগশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক পঠিত। যুগে যুগে আল কুরআনের যত হাফিজ (মুখস্থকারী) পাওয়া যায় তা অন্য কোন গ্রন্থের ক্ষেত্রে কল্পনাও করা যায় না।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিশ্ব মানবতার ইহ–পারলৌকিক শান্তি ও মুক্তির জন্য পবিত্র মাহে রমজানেই কুরআনুল কারিম নাজিল করেন। মহান প্রভু বলেন, “রমজান মাসই হচ্ছে সে–ই মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআনুল কারিম, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসে রোজা রাখবে।–সুরা আল বাকারা ঃ ১৮৫। অনুরূপভাবে সুরাতুল ক্বাদরে আল্লাহ ছুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা বলেন, “নিশ্চয় আমি লাইলাতুল ক্বাদরে কুরআন নাজিল করেছি।” অসংখ্য হাদীস ও ইসলামী চিন্তাবিদদের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত যে, লাইলাতুল ক্বাদর তথা মহিমান্বিত রজনী পবিত্র রমজান মাসেই নিহিত রয়েছে। শুধু কুরআন শরীফ নয়, অন্যান্য আসমানি গ্রন্থও রমজান মাসে নাজিল হয়েছে বলে জানা যায়। হযরত ইমাম আহমদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত ওয়াছেল ইবনে উকাশা রদিআল্লাহু আনহু থেকে রেওয়ায়েত করেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর ছহীফা রমজানের ১তারিখে অবতীর্ণ হয়েছিল। রমজানের ৬ তারিখে তাওরাত শরীফ এবং ২৪ তারিখে কুরআনে ক্বারীম নাজিল হয় (মুসনাদে আহমদ)। আমরা আগেই জানতে পেরেছি, কুরআনে পাক লাইলাতুল ক্বাদরেই নাজিল হয়। হযরত হাসান বসরীর মতে, তা ছিল রমজানের ২৪ তারিখে। মানব জীবনের ধর্মীয় বিধান কুরআন নাজিলের এ মাস আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই কুরআন তেলাওয়াত, অধ্যয়ন, গবেষণা ও বাস্তব জীবনে কুরআনের বিধি–নিষেধ অনুসরণে আমাদেরকে মাহে রমজান কাজে লাগাতে হবে। হাদীস শরীফে আছে, “কুরআন তিলাওয়াত করা সর্বোত্তম ইবাদত।” কুরআনকে বাদ দিয়ে রমজান ও সিয়ামের মর্মোপোলদ্ধি করার সুযোগ নেই। হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এ রমজান মাসে রাসুল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কুরআন শিক্ষা দিতেন (বুখারী শরীফ)। আল কুরআনের অন্তত ২০টি জায়গায় এই পাক কুরআনই যে মানবজীবনের চলার পথের দিক নির্দেশনা দানকারী সে কথা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয়েছে। সুরা আল–বাকারার প্রথমেই বলা হয়েছে, “এই সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেজগারদের জন্য।” কুরআন শেখার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলো যে কুরআন নিজে পড়ে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়”। ( বুখারী শরীফ)
মুসলমানদের উচিত আল কুরআনের আলোকে নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন গড়ে তোলা। অথচ দেখা যায়, ধর্মীয় কিছু আচার–অনুষ্ঠান ও ইবাদত–বন্দেগী ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে কুরআনের অনুসরণ করা হয় না। কুরআনকে জীবনযাপনের বিশাল বলয় থেকে নির্বাসিত করাই বর্তমান বিশ্বে মুসলিম উম্মাহর এই চরম অধঃপতন। তাইতো কাল কিয়ামতের ময়দানে কুরআন ফরিয়াদ করে বলবে, “হে বিশ্ব জাহানের প্রভু! আপনার এ বান্দা আমাকে পূর্ণভাবে গ্রহণ করেনি বরং অবহেলার বস্তু বানিয়েছিল। আমার ও তার মধ্যে আপনি আজকের বিচার দিবসে ফায়সালা করুন। তাকে শাস্তি দিন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘য়ালা ঐ লোককে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন (কুরতুবী)। তাই পবিত্র রমজানুল মোবারকে কুরআন শেখা, বুঝা ও দৈনন্দিন জীবনে মেনে চলার জন্য আমাদেরকে নতুন করে শপথ নিতে হবে। আয় আল্লাহ! আমাদেরকে তৌফিক দান করুন। আমিন।
আমার বাঁশখালী ডটকম
প্রেস বিজ্ঞপ্তি ও প্রতিনিধিরা নিউজ পাঠান
ই-মেইল: amarbanskhali@gmail.com
ভিজিট করুন: www.amarbanskhali.com
প্রধান সম্পাদক শাহ্ মুহাম্মদ শফিউল্লাহ্ ও প্রকাশক
নিচে আপনার মতামত লিখুন
No comments:
Post a Comment