আমার বাঁশখালী.কম ডেক্স রিপোর্টার মোঃ রোমান চৌধুরীঃ
পবিত্র রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস
অর্থাৎ সংযম সাধনার মাস। জীবনের প্রতিটি দিকে সংযমী হবার শিক্ষাকে আমরা যেন
আমাদের জীবনের অনুশীলনে নিয়ে আসতে পারি সেজন্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ৩০
দিন রোজা রাখাকে প্রত্যেক সুস্থ মুসলমান নারী ও পুরুষের প্রতি ফরজ বা অবশ্য
কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। কাজটা যে খুব সহজ এবং হাসতে হাসতে হয়ে
যাবে তা নয়- এটা বোঝাতেই সাধনার কথা বলা হয়েছে। রোজা শুধু অনশন উপবাস বা
পানাহার বর্জন করার নাম নয়। বরং পানাহার বর্জন হচ্ছে রোজার একটা অংশ।
প্রকৃত রোজা তাহলে কী? নবীজি (স) বলছেন, প্রকৃত রোজা হচ্ছে বেহুদা কথা,
ঝগড়া ফাসাদ, তর্কবিতর্ক, অশ্লীল বা খারাপ আলোচনা ইত্যাদি যাবতীয় গুনাহের
কাজ থেকে বিরত থাকার নাম।
রমজান কে বলা হয় একজন মুসলিমের জন্যে ঢাল
বা তলোয়ার স্বরূপ। এই তলোয়ার মানুষের রিপুর বিরুদ্ধে। তার রাগ-ক্ষোভ, ঘৃণা-
ঈর্ষা ও পরচর্চা বা গীবতের বিরুদ্ধে। তাই রমজান মাসে সব ধরনের রাগ ক্ষোভ
ঘৃণা হিংসা থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করা প্রয়োজন। নবীজী (স) এমনও বলেছেন
যে, ‘এ সময় কেউ যদি গালিও দেয় বা খারাপ আচরণ করে তাহলে বলতে হবে, আমি রোজা
রেখেছি।‘ তার মানে এই মাসে সকল খারাপ আচরণ হতে দূরে থাকতে হবে এবং ভালো
আচরণগুলোর অভ্যাস করতে হবে।
তাই আমাদের নিজেদের সংযমের উত্তম অনুশীলন
হতে পারে কথাবার্তা ও আচরণে সংযমের মধ্য দিয়ে। এ বিষয়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কারণে বেলা যতো গড়াতে থাকে অনেকেরই মেজাজ ততো চড়তে থাকে।
আমরা যখন ছোট ছিলাম কাউকে কাউকে বলতে শুনতাম বিকালের দিকে উনার ধারে কাছে
বেশি যাবার দরকার নাই। কারণ কী? কারণ হচ্ছে উনি রোজা রেখেছেন এবং বিকেলের
দিকে উনাকে ‘রোজায় ধরে ‘। রোজায় ধরে মানে হচ্ছে সারাদিন রোজা রেখে এখন উনার
মেজাজ খুব খারাপ। অল্প কিছু হলেই তিনি রেগে যাবেন। তো সাবধান করে দেবার
জন্যে একথা বলা হতো।
আমরা আসলে দিনের এই সময়টাতে এসেই মেজাজ
খারাপ করে রোজাকে হালকা করে ফেলি। পাশাপাশি যেহেতু স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে
যায়, অফিসও আগেই ছুটি হয়ে যায় দেখা যায় যে গল্পগুজব হয় বেশি। আর অধিকাংশ
ক্ষেত্রে আমাদের আলোচনায় অন্যদের সমালোচনা বা পরচর্চা চলে আসেই। এই পরচর্চা
বা গীবত আমাদের সারাদিনের এতো কষ্টার্জিত রোজাকে নষ্ট করে দেয়। গীবত হচ্ছে
যে দোষটি একজনের মাঝে সত্যি সত্যিই আছে কিন্তু সে দোষের কথাটিই আমরা যখন
তার অনুপস্থিতিতে আরেকজনের কাছে তাকে হেয় করার জন্যে বলছি সেটিই গীবত।
নবীজী (স) বলেছেন, গীবত বা পরনিন্দা ওজু ও রোজা নষ্ট করে- মেশকাত। তাই
রমজান মাসে আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবো পরচর্চা ও গীবত থেকে মুক্ত থাকতে।
রমজান মাস হচ্ছে প্রার্থনা কবুল হবার মাস। রোজা রাখার মতো এতো কষ্টকর একটি
ইবাদতের পরেও আমাদের অনেকেরই প্রার্থনা কবুল হয় না কারণ আমরা এই গীবত
থেকে বেড়িয়ে আসতে পারি না বলে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি পবিত্র রমজান মাস
হচ্ছে অল্প পরিশ্রমে অনেক বেশি অর্জনের সুযোগ। তাই আমরা সবাই যেন এই
রমজানের সৌজন্যে সকল প্রকার রাগ-ক্ষোভ, ঘৃণা-ঈর্ষা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের
হৃদয়কে পরিচ্ছন্ন করতে পারি, নিজের পরিমন্ডলের মানুষদের ভুল-ত্রুটিগুলো যেন
কিছুটা হলেও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে পারি- এটাই আমাদের প্রার্থনা।
পাশাপাশি যতো ফালতু আড্ডা এবং অন্যের সমালোচনা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে
পারবো ততোই আমরা সত্যিকারের রোজাদারের যে বিশাল মর্জাদা স্রষ্টার কাছে সেই
মর্জাদা লাভে ধন্য হবো। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে এই রমজানে
প্রকৃত সংযম অনুশীলনের তওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: বি ফার্ম, এম ফার্ম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমার বাঁশখালী ডটকম
প্রেস বিজ্ঞপ্তি ও প্রতিনিধিরা নিউজ পাঠান
ই-মেইল: amarbanskhali@gmail.com
ভিজিট করুন: www.amarbanskhali.com
এম.ছৈয়দুল আলম কর্তৃক প্রকাশিত সংবাদ।
নিচে আপনার মতামত লিখুন




No comments:
Post a Comment