আমার বাঁশখালী.কম, নিজস্ব প্রতিবেদক:
বঙ্গোপসাগরের বাঁশখালী-কুতুবদিয়া চ্যানেলের সোনারচর এলাকায় ট্রলার ডুবিতে ট্রলারসহ বাঁশখালীর ২১ মাঝিমাল্লা নিখোঁজ হয়েছে। প্রায় এক সাপ্তাহ পুর্বে তারা সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়েন। গতকাল সোমবার ট্রলার মালিক বাঁশখালীর পুঁইছড়ি ইউনিয়নের বহদ্দারহাট জলদাশ পাড়ার হরিধর জলদাশ সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, তার মালিকানাধীন এফবি সুর্য্যমুখি ফিশিং ট্রলারটি গভীর সাগরের সোনারচর এলাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে। এই ঘটনায় বাঁশখালীর পুইঁছড়ির জেলেপাড়ায় নিখোঁজ মাঝিমাল্লাদের পরিবারের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
জানা গেছে, বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের বহদ্দারপাড়া এলাকার হরিধর জলদাশের মালিকানাধীন ফিশিং ট্রলার ‘এফভি সুর্য্যমুখি’ ট্রলারটি গত ৩০ মে বঙ্গোপসাগরের সোনারচর এলাকায় মাছ ধরতে যায়। গত ১২ জুন ফিশিং ট্রলারটি ঝড়ের কবলে পড়ে। এতে করে ২১ জন মাঝিমাল্লাসহ ট্রলারটি নিখোঁজ হয়ে যায়।
বাঁশখালীর পুঁইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জহিরুল ইসলাম অন্য ট্রলারে কাজ করা প্রত্যক্ষদর্শী জেলেদের বরাত দিয়ে জানান, প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ায় কবলে পড়ে এফভি সুর্য্যমুখি। এরপর ট্রলারটির ভাগ্যে কী ঘটেছে তা আর কেউ জানে না। পরিবারের পক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হয়েছে যে, বিপদের আশঙ্কা জেনেও কোন ব্যবস্থ্রা গ্রহণ করেনি মালিক পক্ষ। শুধু তাই নয়, ১২ তারিখের ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার তথ্য জানিয়ে বোট মালিক বাঁশখালী থানায় জিডি করেছেন ১৪ জুন। এতে করে নিখোঁজ মাঝিমাল্লা ও জেলেদের খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হওয়া জেলে ও মাঝিমাল্লারা হলেন রাজহরি জলদাস (৫০), দধি গোপাল জলদাস (৫১), লিটন কান্তি জলদাস (৩৬), বুলবুল জলদাস (৪৫), সুবল জলদাস (৩৮), সৌরভ জলদাস (৪১), জয়রাম জলদাস (৩৬), অনিল কুমার দাস (৪৬), কর্ণ জলদাস (৪০), বিমল জলদাস (৪৬), উপেন্দ্র লাল দাস (৭০), ব্রহ্মা পদদাস (৫১), সজল কান্তি দাস (৪২), নিরঞ্জন দাস (৪৮), বুলবুল দাস (৪৬), মদন দাস (৩৮), লিটন কৈবর্ত (৩৮), জিয়া জলদাস (৩৫) এবং ফিশিং বোটের মাঝি অন্ন কৈবর্ত (৩৮)। এর মধ্যে ১৮ জনের বাড়ি বাঁশখালী উপজেলায়। এছাড়া চকরিয়ার ১ জন, কুতুবদিয়ার ১ জন এবং লক্ষ্মীপুর জেলার ১ জন রয়েছেন।
স্বজনদের অভিযোগ লঘু চাপের কারণে উত্তাল সাগরে বোট নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় তথ্য অবগত হওয়ার পরও প্রশাসন, পুলিশ এবং কোস্টগার্ডকে জানাতে অনেক বিলম্ব করেছে। তারা বলেন, যদি দ্রুততার সঙ্গে অবহিত করা হতো তাহলে নিখোঁজদের উদ্ধারের তৎপরতাও এতদিনে সম্পূর্ণ হয়ে যেত। এখন তাদের জীবিত নাকি লাশ অবস্থায় উদ্ধার করা হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা নিয়ে উৎকণ্ঠিত পরিবারগুলো।
নিখোঁজ জেলে ও মাঝিমাল্লাদের জন্য তাদের পরিবারগুলোকে চলছে আহাজারি। স্বজনরা প্রতিদিনই সাগর পাড়ে অপেক্ষায় রয়েছেন। ধর্ণা দিচ্ছেন প্রশাসন, থানা, কোস্টগার্ড এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। কিন্তু বোট এবং জেলে ও মাঝিমাল্লাদের বিষয় কোন তথ্যই মিলছে না।
বাঁশখালী থানা পুলিশ সুত্র জানায়, সাধারণ ডায়রির পর তাৎক্ষণিকভাবে উপকূলবর্তী সকল থানা, কোস্টগার্ড এবং প্রশাসনকে বার্তা পাঠানো হয়েছে। সে অনুযায়ী বোট ও জেলেদের উদ্ধারের চেষ্টাও চলছে। নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি বিলম্বে অবহিত হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিখোঁজদের উদ্ধারের চেষ্টায় ত্রুটি নেই। পুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্যরা এই ২১ জনকে উদ্ধারে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। আমার বাঁশখালী ডটকম।
No comments:
Post a Comment