আমার বাঁশখালী ডটকম:
রাজধানীর বাড্ডা থেকে কারওয়ান বাজারে অফিস আসতে ফুটপাতে অনেক পথশিশুকে দেখা যায়। রিতু, ঝরণা, সোনালি এ রকম অনেক নামের শিশু। এরা সবাই ফুটপাতে থাকে। এদের কারো বাবা নেই, কারো মা নেই। এরা রাস্তার পাশেই বেড়ে ওঠেন। রাস্তার পাশেই হাত পেতে যা পান তা দিয়ে পার করে দেন দিনের পর দিন আবার মাসের পর মাস। এভাবেই কেটে যায় তাদের জীবন।
তবে, সবাই হাত পেতে চলে না, অনেকেই ফুল বা চকলেট বিক্রি করেও দিন পার করে দেন। এভাবেই চলার চেষ্টা চালান অনেক ছিন্নমূল শিশু।
আর একিদিন পরেই মনে হয় ঈদ। রাজধানীর বড় বড় শপিং মলগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। এতে বিক্রেতারাও বেশ খুশি ভালো বিক্রি করতে পেরে। এই ঈদকে ঘিরে বড় ধরণের লেনদেন হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- ক্রেতাদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা হলো কে কতো দামে পণ্য কিনলো। সবচেয়ে ভালো ব্যান্ডের পণ্য কিনলো। বেশি দামে পণ্য কিনতে পারলে সে বেশি খুশি। সে সবার মধ্যে বড়াই করতে পারে সে অনেক বেশি দামে কিনেতে পারছে। এর চেয়ে বড় কথা হলো কে কতো বেশি দামের পণ্য উপহার দিতে পারলো।
এ নিয়ে বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে কথার কাটাকাটি হয়। বিশেষ করে নারীরা তাদের বান্ধবী বা ভাবিদের সামনে বড়াই করেন, তার স্বামী বেশি দামের পণ্য উপহার দিয়েছেন। ধনীর দুলাল-দুলালীদের কাছে ঈদ মানে বেশি দামের নতুন পোশাক বা নতুন কোনো পণ্য।
এছাড়াও ছোট শিশুরা ঈদের দিন নতুন পোশাক পড়ে ঘুরাঘুরি করে থাকেন মনের আনন্দে। মা-বাবা বা বড়রা ছোটদের ঈদ উপহার হিসেবে নতুন পোশাক দিয়ে থাকেন। কিন্তু একবার ভাবুন তো যাদের মা-বাবা নেই। পথের ধারেই ধুলো-বালিতে পড়ে মানুষ হচ্ছে তাদের ঈদ কেমন কাটে। তারা কি নতুন কোনো পোশাক পড়ে। তাদের নতুন পোশাকের জন্য বায়না ধরার কেউ নেই। তারা হয়তো পথ পানে চেয়ে থাকেন যদি কেউ একটা পোশাক দেন। অনেক সময় কোনো হৃদয়বান মানুষ এগিয়ে আসেন তাদের জন্য। তাদের হাসি ফুটানোর জন্য।
ছোট এই পথশিশুদের ঈদ নিয়ে কারো কি মাথা ব্যথা আছে। অনেকেই তাদের কথা হয়তো ভাবেন।
জানা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশে কয়েক লাখ পথশিশু রয়েছে যাদের ৮০ ভাগেরই জন্ম ফুটপাথে। অবহেলা-অযতনে বেড়ে ওঠা এই শিশুদের ‘টোকাই’, ‘পথকলি’, ‘ছিন্নমূল’ বা ‘পথশিশু’ বলা হয়ে থাকে।
সমাজসেবা অধিদফতরের তথ্য মতে, বাংলাদেশের ৭৫ ভাগ পথশিশুই রয়েছে রাজধানীতে। তাদের মধ্যে শতকরা ৫৩ ভাগ ছেলে আর ৪৭ ভাগ মেয়ে। নোংরা পরিবেশ আর অপুষ্টিতে বেড়ে ওঠা এসব শিশুর ৮৫ ভাগই রোগাক্রান্ত। পথশিশুদের জীবনযাপন অত্যন্ত দুর্বিষহ। অধিকাংশ সময়ই রাস্তা, পার্ক, ট্রেন-বাস স্টেশনে, লঞ্চঘাটে, সরকারি ভবনের নিচে ঘুমায় এবং প্রতিনিয়তই নাইটগার্ড কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এই পথশিশুদের একটি বড় অংশ শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পৌঁছার আগেই জড়িয়ে পড়ে চুরি, ছিনতাই, মাদক বিক্রি, পিকেটিংসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বলে প্রায় এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। এর জন্য পুরাপুরি এদের দোষ দেওয়া যায় না বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
বিআইডিএস ও ইউনিসেফের এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশে ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৮ জন পথশিশু রয়েছে। কেবল ঢাকা শহরে রয়েছে সাত লাখ পথশিশু। তবে এ সংখ্যা বাড়ছে। আর ২০২৪ সাল নাগাদ সংখ্যাটা হবে ১৬ লাখ ১৫ হাজার ৩৩০ জন। পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে মাদক সেবন করে। ১৯ শতাংশ হেরোইন, ৪৪ শতাংশ ধূমপান, ২৮ শতাংশ বিভিন্ন ট্যাবলেট এবং ৮ শতাংশ ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা করে থাকে। ঢাকায় এদের কমপক্ষে ২২৯টি মাদকের স্পট রয়েছে। অন্য এক জরিপে মাদকাসক্ত শিশুদের মাদক গ্রহণ ও বিক্রয়ে ৪৪ শতাংশ, পিকেটিংয়ে ৩৫ শতাংশ, ছিনতাই, নেশাদ্রব্য বিক্রয়কারী এবং অন্যান্য অপরাধে জড়িত ২১ শতাংশ পথশিশুর যুক্ত থাকার তথ্য উঠে এসেছে।
এই পথশিশুদের সুপথে ফিরিয়ে আনতে পারলে রাষ্ট্র, সমাজ সবারই উপকার হবে বলে মনে হয়। এ নিয়ে কারো সন্দেহ থাকার কথা নেই। কিন্তু এ পথশিশুদের নিয়ে কথা ভাবা হচ্ছে। ভাবলেও সেই ভাবনার অগ্রগতি কেমন। এই পথশিশুদের কল্যাণে আরও ভালো উদ্যোগ নেওয়া যায় কি না তাও ভাবা দরকার। মনে হয়, সময় এসেছে এই পথশিশুদের নিয়ে আরও ভাবা। যাতে তারা সমাজের মুল ধারার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। যারা সামজকে নিয়ে চিন্তা করেন, সমাজের উন্নয়নে ভাবেন তাদের নতুন করে ভাবতে হবে এই শিশুদের নিয়ে। যাতে তারা মৌলিক অধিকারগুলো পায়। তারা যাতে অধিকার বঞ্চিত না হয়।
সব কথার শেষ কথা হলো- ঈদের আনন্দ সবার জন্য শুধু কাগজ কলমেই নয়। এটা বাস্তবে রুপ দেওয়ার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসা দরকার। এই নাম না জানা পথশিশিুরা একটু সহানুভূতি পেতে পারেন। তাদের ঈদের আগে বেশি দামের না হলেও একটু কম দামের নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করে দিতে পারলে মন্দ হয় না। আপনার একটু সহানুভূতিতে ফুটতে পারে ওই শিশুদের মুখে হাসি। তাদের মুখের হাসি ফুটানোর জন্য একটু সহানুভূতির হাত প্রসারিত করলে আপনিও পেতে পারেন চরম তৃপ্তি। এদের শত কষ্টের মধ্যেও একটি নতুন পোশাক এনে দিতে পারে সুখানুভূতি। এ জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে নেওয়া যেতে পারে উদ্যোগ। সংশ্লিষ্টরা এটা নিয়ে ভাববেন আশা রাখি। দেশে কোটিপতি বা ধনী শ্রেণির মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এই ধনী শ্রেণির মানুষগুলো এগিয়ে আসতে পারেন তাদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য। আসুন না সবাই মিলে এই পথশিশুদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য এগিয়ে আসি, এমনটাই কাম্য সবার প্রতি। আমার বাঁশখালী ডটকম। সূত্র: একুশে টেলিভিশন।
লেখক: সাংবাদিক, শামসুল হক
No comments:
Post a Comment