আমার বাঁশখালী ডেস্ক:
যে দলটির গড় বয়স মাত্র ২৬ বছর তারাই এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ফ্রান্সের জয়ের কেতন যেখানে উড়ছে সেখানে জাগরেবে হতাশায় মুষড়ে পড়েছে ক্রোয়েশিয়া। মদ্রিচ-রাকিতিচদের মলিন মুখ যেন পুরো ক্রোয়েশিয়ার প্রতিচ্ছবি। বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ জিতলো দিদিয়ের দেশমের ফ্রান্স।
বিশ্বকাপের ফাইনালটাও হলো ফাইনালের মতো। কেউ কাউকে ছাড় দেওয়ার মতো নয়। উত্তেজনাকর ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া একদমই পাত্তা পেলো না ফ্রান্সের কাছে। কিলিয়ান এমবাপে, পগবা, গ্রিজম্যানদের লক্ষ্যভেদই ফ্রান্সকে এনে দেয় দ্বিতীয় শিরপো। অন্যদিকে, ম্যাচটি হারার জন্য বোধহয় ভাগ্যকেও কিছুটা দুষতে পারেন ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলাররা। কেননা তারা ফ্রান্সকে একটি গোল ভিএআরের মাধ্যমে এবং একটি আত্মঘাতী গোলের মাধ্যমে মোট দুটি গোল উপহার দেন।
ফাইনালে মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই আক্রমণ করে খেলতে থাকে ক্রোয়েশিয়া। বল নিজেদের দখলে নিয়ে আক্রমণাত্মকভাবে খেলতে থাকে প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলা দলটি।
চমকের বিশ্বকাপে ফাইনালের মঞ্চেও আরো একবার চমক দেখলো সবাই। ফাইনালের মঞ্চে ১৮ মিনিটেই ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ডি বক্সের বাইরে গ্রিজম্যানকে ফাউল করেন ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলার। ফ্রি কিক পায় পায় ফ্রান্স। গ্রিজম্যানের নেওয়া সেই ফ্রি কিকে মানজুকিচের মাথা ছুঁয়ে বল জালে জড়ালে আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্রোয়েশিয়া। বিশ্বকাপের ফাইনালের ইতিহাসে প্রথমবারের মত আত্মঘাতী গোল করলেন মানজুকিচ।
পিছিয়ে পড়ে দমে যায়নি ক্রোয়েশিয়া। ২১ মিনিটে ভিদার শট একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ২৮ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে পেরেসিচকে ফাউল করে ফ্রি কিক পায় মদ্রিচ। মদ্রিচের নেওয়া ফ্রি কিক থেকে ভিদার ক্রসে বা-পায়ের দুর্দান্ত শটে গোল করে ক্রোয়েশিয়াকে সমতায় ফেরান ইভান পেরেসিচ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও গোল করে দলকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন এই ইন্টার মিলান তারকা।
গোল খেয়েও কি বসে থাকার পাত্র ফ্রান্স? ফেবারিটের তকমা লাগানো ফ্রান্স ৩৫ মিনিটে কর্নার থেকে আক্রমণ করলে ইভান পেরেসিচের হাতে বল লাগলেও রেফারি এড়িয়ে যান। কিন্তু ভিএআরের মাধ্যমে রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন।
ফাইনালের মঞ্চেও ভিএআর নির্ধারক হয়ে দাড়ালো। স্পট কিক থেকে টুর্নামেন্টে নিজের ৪র্থ গোলটি করে ফ্রান্সকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন অ্যান্তনিও গ্রিজম্যান। বিশ্বকাপের ফাইনালের ইতিহাসে পেরেসিচ দ্বিতীয় ফুটবলার যিনি ম্যাচে গোল করলেন এবং প্রতিপক্ষকে পেনাল্টি উপহার দিলেন। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় ফ্রান্স।
গোল শোধে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে ক্রোয়েশিয়া। ৪৮ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার রেবিচের শট রুখে দেন লরিস। ৫৩ মিনিটে গোল ব্যবধান মারার সুযোগ পেয়েছিলেন এমবাপে। কিন্তু দ্রুত গতির এই ফুটবলার ডি বক্সের ভেতর সুবাসিচের গায়ে শট মারেন।
স্রোতের বিপরীতে কাউন্টার এটাক থেকে ডি বক্সের সামান্য বাইরে থেকে ডান পায়ে শট নেন পগবা কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে প্রতিহত হলে ফিরতি শটে বা-পায়ে দুর্দান্ত গোল করে ফ্রান্সকে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন এই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা।
গোল খেয়ে যেন খেই হারিয়ে ফেলে ক্রোয়েশিয়া। এই সুযোগে আরো এক গোল করে বসে এমবাপে। ৬৫ মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে ডান পায়ের দুর্দান্ত শটে এই বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ গোলটি করেন এমবাপে। কিংবদন্তী ফুটবলার পেলের পর দ্বিতীয় তরুণ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করলেন এই পিএসজি তারকা।
বিশ্বকাপ গোলরক্ষকদের জন্য অভিশাপ হয়েই রইল। ফর্মের তুঙ্গে থাকা গোলরক্ষকরা শিশুসুলভ ভুল করলেও বাকি ছিলেন ফ্রান্সের হুগো লরিস। ফাইনালের মঞ্চে তিনিও দৃষ্টিকটু ভুল করে বসেন। ৬৯ মিনিটে ফ্রান্সের ডিফেন্ডার লরিসকে ব্যাক পাস দেন। কিন্তু রক্ষণমুখে থাকা মানজুকিচকে কাটাতে গিয়ে তার পায়ে লেগে গোল খেয়ে বসে ফ্রান্স।
বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে এক ম্যাচে আত্মঘাতী গোল এবং দলের পক্ষে গোল করলেন মানজুকিচ। ম্যাচের শেষ দিকে গোল শোধের অনেক চেষ্টা করলেও আর তেমন কোন সুযোগই তৈরি করতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। ফলে ১৯৯৮ সালের পর দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হলো ফ্রান্স।
No comments:
Post a Comment