বিশ্বকাপ শিরোপার লড়াইয়ে আজ মুখোমুখি ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া পুনরাবৃত্তি নাকি নতুন ইতিহাস - আমার বাঁশখালী ডটকম AmarBanskhali.Com

ব্রেকিং নিউজ

শীর্ষ বিজ্ঞাপন

নিউজ এর উপরে বিজ্ঞাপন

Sunday, July 15, 2018

বিশ্বকাপ শিরোপার লড়াইয়ে আজ মুখোমুখি ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া পুনরাবৃত্তি নাকি নতুন ইতিহাস


আমার বাঁশখালী ডেস্ক: আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। আর মাত্র একটি ম্যাচ। লুঝনিকির সবুজ গালিচায় ৯০ মিনিটের লড়াই (ম্যাচ যদিঅতিরিক্ত সময়  টাইব্রেকারে না গড়ায়) আর তারপরই উচ্চারিত হবে একটি দল  একটি দেশের নাম।

বিশ্বের ২১০টি দেশ কুর্ণিশ করবে সে একটি দলকে। আগামী চার বছরের জন্য ফুটবলের সিংহাসনে অধিষ্ঠিতহবে তারা। বিশ্বজয়ের স্বপ্ন নিয়ে বাছাইপর্ব শেষে ৩২টি দেশ পাড়ি দিয়েছিলেন পুতিনের দেশ রাশিয়ায়। ৩১দিনের জমজমাট নাটক শেষ। ৬৩ ম্যাচের লাগাতার স্নায়ুর চাপ সামলে বাজিমাতের টেনশনেও সমাপ্তি। কারাথাকলেনকারা বিদায় নিলেনঅবসান সেই তর্কেরও। ফুটবলের বিশ্বযুদ্ধের  ফাইনালে মুখোমুখি ফ্রান্স ক্রোয়েশিয়া। যে ম্যাচের সঙ্গে জড়িয়ে থাকছে আবেগ আর ইতিহাস। থাকছে প্রতিশোধের একটা দিকও।

মহাতারকারা কেউ নেই। এই ম্যাচ আসলে ধারাবাহিক থাকা দুই দলের। ফুটবলপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষাকরছেন আজ রাতের ফাইনালের জন্য। ফ্রান্স কি পারবে দ্বিতীয় বারের জন্য চ্যাম্পিয়ন হতে ? হুগো লরিসেরদলের সামনে ইতিহাস ছোঁয়ার হাতছানি। এর আগে ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফ্রান্স। সেবার অধিনায়ক ছিলেন দিদিয়ের দেশম।  বার তিনি কোচ। এই পর্যায়ে কতটা চাপ থাকেআর কী করতে হয়তা কাটিয়ে উঠতে জানেন। অপরদিকে ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল ইতিহাসে বিশ্বকাপ নেই। ১৯৯৮ সালে প্রথমবারবিশ্বকাপে এসে সেমিফাইনালে ওঠাই ছিল তাদের সেরা সাফল্য। রাশিয়ায় ফাইনালে উঠে যা এর মধ্যেই ছাপিয়েগিয়েছেন লুকা মদ্রিচইভান রাকিতিচরা। কাপ জিতলে নতুন চ্যাম্পিয়ন পাবে ফুটবলবিশ্ব। সৃষ্টি হবে ইতিহাস।যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশের ফুটবল কেন্দ্র করে বাঁচার লড়াই পাবে অন্য মাত্রা। গোটা দেশ তাই ফুটবল

আবেগেকাঁপছে। এই ম্যাচটির জন্য গেল এক মাস অধীর আগ্রহে ছিল ফুটবলপ্রেমীরা। আশা  আশা ভঙ্গের দোলাচলেআগামীকাল ফ্রান্স  ক্রোয়েশিয়ার ফাইনাল দেখবে পুরো বিশ্ব। কারও পছন্দের দল রয়েছে ফাইনালেকারওনেই। তারপরও তারুণ্যনির্ভর ফ্রান্স লড়বে প্রথমবারের মত ফাইনালের জগতে প্রবেশ করা ক্রোয়েশিয়ার। একমাস আগে স্বাগতিক রাশিয়া

সৌদি আরবের ম্যাচ নিয়ে যতটা উত্তেজনা ছিলশেষ মুহূর্তেও সেই একই উত্তেজনাবিরাজ করছে। আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসিপর্তুগালের দলপতি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ব্রাজিলের দলনেতা নেইমার অথবা জার্মানিস্পেনের মত বাঘাবাঘা দল না থাকারও পর ফাইনাল নিয়েউত্তেজনা তুঙ্গে। বিশ্বকাপ কি পুরনো স্বাদ পাবে না

কি নতুন কোন দেশকে আলোকিত করে তুলবে। ১৯৯৮সালে প্রথম  শেষবারের মত বিশ্বকাপ জয় করে ফ্রান্স। আর এবারই প্রথমবারের মত ফাইনালে উঠলো ৪৪ লাখলোকসংখ্যার দেশ ক্রোয়েশিয়া।
বয়স বিবেচনায় এবারের আসরে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ দল ফ্রান্স। দ্রুতগতির এমবাপ্পেগ্রিজম্যানের সাথে লড়াইহবে শিরোপা জন্য মরিয়া হয়ে উঠা লুকা মদ্রিচইভান রাকিটিচরা। এবারের আসরের সেরা মিডফিল্ডার হিসেবেধরা হচ্ছে মদ্রিচকে। তারপরও অনেকের কাছে এটি হতাশার। কারণ ঐহিত্যগতভাবে যারা বিশ্বকাপে দাপটদেখিয়ে আসছে অথবা দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দলের ফাইনালে না থাকায়। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই নিয়েদ্বিতীয়বার ঘটতে যাচ্ছেফাইনালে নেই ব্রাজিলজার্মানিইতালি  আর্জেন্টিনা। ২০১০ সালে প্রথমবার এমনটিদেখা গিয়েছিল।  বার ফাইনাল খেলেছিল স্পেন


নেদারল্যান্ডস। তারপরও এবারের আসর লাতিনআমেরিকার সমর্থকদের কাছে বর্ণাঢ্য আয়োজনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে দুটিইউরোপিয়ান দলের সেরা শক্তির প্রদর্শন দেখবে ফুটবল বিশ্ব। এই বিশ্বকাপ জিতে আর্জেন্টিনা  উরুগুয়ের পাশেবসার সুযোগ আছে ফ্রান্সের সামনে। কারণ আর্জেন্টিনা  উরুগুয়ে দুবার করে বিশ্বকাপ জয় করে। ১৯৯৮সালে প্রথম  শেষবার বিশ্ব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়েছিল ফ্রান্স।
আজ মহারণে ফ্রান্সের ভরসা কিলিয়ান এমবাপে। ১৯ বছর বয়সি খেলছেন দুরন্ত ফুটবল গোল করেছেনস্কিলের ঝলকানিতে মুগ্ধও করেছেন। এমবাপের সঙ্গে গ্রিজম্যান আর জিরুদ মিলে আক্রমণ রীতিমতো তীক্ষèমাঝমাঠে পল পগবা আর কান্তে রয়েছেন। মাতুইদি ফিট হয়ে উঠেছেন। রক্ষণও জমাট। গোলরক্ষক লরিসঅধিনায়কও। সব মিলিয়ে ফ্রান্স দলে দারুণ ভারসাম্য। চোটআঘাতের উদ্বেগও নেই। ক্রোয়েশিয়াকে কিন্তুদুশ্চিন্তায় রাখছে পেরিসিচের চোট। নকআউটে টানা তিন ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে খেলাও ক্লান্তি আনতে বাধ্যযাফ্রান্সের নেই।


ফাইনালে আবার প্রতিশোধের কাহিনীও রয়েছে। বিশ বছর আগে ডেভর সুকেররা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেহেরেছিলেন ফ্রান্সের কাছে। ফ্রান্স হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন। এবার কি ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হবেনসুকেরের উত্তরসূরীরা ? নাকিইতিহাসের হবে পুনরাবৃত্তিবিশ্বকাপে ফের ফ্রান্স হারাবে ক্রোয়েশিয়াকে ? আবেগপ্রতিশোধইতিহাস। বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রেক্ষাপট তাই জমজমাট।
এর সঙ্গে মাঠের লড়াইও বেশ উত্তেজক। দুই গোলরক্ষক সুবাসিচ  লরিসের একে অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ারচেষ্টা। মাঝমাঠে পগবা  কন্তের সঙ্গে মদ্রিচ  রাকিতিচের বল দখলের লড়াই। এমবাপের সঙ্গে আবার সোনারবলের লড়াইয়ে রয়েছেন মদরিচ। বিশ্বকাপ ফাইনাল মানেই নায়ক হওয়ার মঞ্চ। মঞ্চ নিজেকে ছাপিয়েযাওয়ারও। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি চোখ যে তাকিয়ে থাকবে ওদিকেই।
তবে সে চাপ যেন প্রভাবিত করতে না পারে ক্রোটদের মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছেন কোচ দালিচ। ইংল্যান্ডকেহারানোর নায়ক পেরিসিচ লুজনিকিতে বাঁ পায়ের থাইতে চোট পান। সেমিফাইনালের পর ক্রোট মিডফিল্ডারকেমস্কোর এক হাসপাতালে পাঠাতে হয়। ক্রোয়েশিয়ার কোচ দালিচ এখনই পেরিসিচের খেলার সম্ভবনা নিয়ে মন্তব্যকরেননি। ফাইনালে সামনে মানজুকিচকে রেখে  ছকে খেলতে পারে ক্রোয়েশিয়া। পিছিয়ে থেকেও টানাতিন ম্যাচ জেতায় টিমের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। তবে নকআউটে তিন ম্যাচ মিলিয়ে বাড়তি ৯০ মিনিট খেলারধকল সামলে মদ্রিচরা কতটা তরতাজা থাকেন তা নিয়ে রয়েছে কৌতূহল। ফাইনালের আগে মাত্র ৪৮ ঘণ্টাপেয়েছে ক্রোয়েশিয়া। তারমধ্যেই বিশ্রাম– হালকা অনুশীলনে নিজেদের নতুন করে নিয়েছে তারা। সম্ভাব্যএকাদশে পেরিসিচকে ধরে নিয়েই ছক সাজানোর সম্ভাবনা। গোল দুর্গের নিচে দায়িত্ব সামলাবেন সুবাসিচ।


রক্ষণের দায়িত্ব সামলাবেন ভরসাজিকোলভরেনভিদাস্ট্রিনিচ। মাঝমাঠের দুরন্ত ওঠা যাঁরা অপারেট করবেনতাঁরা হলেন মদ্রিচবর্জোভিচরাকিটিচ। আর আপফ্রন্টের দায়িত্বে থাকবেন পেরিসিচমানজুকিচ  রেবিচ।
অন্যদিকে ম্যাচ ধরে ধরে অঙ্ক করে ফাইনালে ফ্রান্স। শেষ ম্যাচের সমীকরণ যে আলাদা তা বিলক্ষণ জানেনফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশম। জানেন উল্টোদিকের টিম প্রথমবার ফাইনালে উঠে কতটা ক্ষুধার্ত। কতটাদৌড়বাজ এবং কতটা পরিশ্রমী। পিছিয়ে থাকা ম্যাচও বের করতে পারে। ক্রোয়েশিয়াকে রুখতে দেশমের ছক৩। ফরাসিদের সুবিধা গ্রিজম্যানএমবাপে আসল সময়ে জ্বলে উঠেছেন। তাঁরা আটকে গেলেও উমতিতিপেভার্ডরা গোল করে যাবেন। ফাইনালে ফরাসি শিবিরে চোটআঘাতের খবর নেই।
সামনে জিরুদমাতৌদি আর গ্রিজম্যান। একটু পিছন থেকে অপারেট করতে পারেন তরুণ তুর্কি এমবাপে।


মাঝমাঠে তাঁর সঙ্গী কান্তেপগবা। আর ডিফেন্স দুর্গের দায়িত্ব সামলাবেন পেভার্ডভারানেউমতিতি হার্নান্দেজ। গোলের দায়িত্বে অধিনায়ক লরিস।
দুই দলের অতীত পরিসংখ্যানে অবশ্য বেশ এগিয়ে ফ্রান্স। আগের পাঁচ দেখায় ক্রোয়েশিয়া একবারও জয়ের মুখদেখেনি। পাঁচ দেখায় তিনবারই জিতেছে ফ্রান্স এবং বাকি দুই ম্যাচ হয়েছে ড্র। ক্রোয়েশিয়া শেষ দুই দেখায় ড্রকরতে পেরেছিলযা ফাইনালের আগে তাদের জন্য স্বস্তির কারণ হতে পারে। যদিও শেষ তাদের দেখা হয়েছিল২০১১ সালে। পরিসংখ্যানে তেমন নজর নেই ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচের। তার ভাষায় যারাভালো খেলবে তারাই জিতবে। রাকিটিচ বলেনআমরা যোগ্য দল হিসেবেই ফাইনালে উঠেছি। মরিয়া হয়ে আছিফাইনাল খেলার জন্য  ইতিহাস গড়ার জন্য। আমাদের দারুণ কিছু খেলোয়াড় আছে যারা ম্যাচের ভাগ্যপরিবর্তন করে দিতে পারে।  মিডফিল্ডার অবশ্য ফ্রান্সকেই এগিয়ে রাখছেন। তবে প্রতিপক্ষকে বিন্দুমাত্র ছাড়দিতে নারাজ তিনি। বার্সেলোনার এই মিডফিল্ডার বলেনআমরা এতোদিন যেমনটা খেলেছি সেই খেলাটাইখেলতে চাই। আমাদের হারানোর কিছুই নেই। ফাইনালে আমরা নয় ওরাই চাপে থাকবে।


ফাইনালে যে ফ্রান্স সতর্ক হয়েই খেলবে সেটা নিশ্চিত করেছেন মিডফিল্ডার পল পগবাও। পগবা বলেন২০১৬সালের ইউরোতে সেমিফাইনালে জার্মানিকে হারিয়েই আমরা ভেবেছিলাম শিরোপা জিতে গেছি। এবার আর সেইভুলের পুনরাবৃত্তি করবো না আমরা। সম্পূর্ণ নতুন এক ম্যাচের মতো মনে করেই খেলতে নামব আমরা। তিনিবলেনআমরা ভালোভাবেই টুর্নামেন্ট শেষ করতে চাই। আমার মনে হয় না ক্রোয়েশিয়া দলে ক্লান্তিজনিত সমস্যাথাকার কথা। কেন না ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তারা কখনোই ক্লান্তি প্রদর্শন করেনি। আমরা সতর্ক থেকেই তাদেরবিপক্ষে খেলবো

No comments:

Post a Comment

পোস্টের নীচে বিজ্ঞাপন