![]() |
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্টান নাপোড়া সেখেরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তী উৎসব ও বিজয় দিবস। ৭২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দিনভর নানা আয়োজনে মেতেছিলেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও র্বতমান শিক্ষার্থীরা। নেচে- গেয়ে কিংবা হারানো দিনের স্মৃতিতে হারিয়ে গিয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মাতিয়েছেন হীরন্ময় বিদ্যাপীঠ।
দিনটি ছিল শুধুই বিদ্যালয়ের নবীন প্রবীণ শিক্ষার্থীদের। আবেগি আয়োজনে ঘরে থাকতে পারেননি বিদ্যালয়ের আশেপাশের মানষরাও। দক্ষিণ চট্টগ্রামের এ জনপদে যেন বাঁধাভাঙ্গা উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছিল সেদিন। একটি বিদ্যালয়ের প্রতি মানুষের কতটুকু আস্থা ও ভালোবাসা থাকতে পারে তা তিন কিলোমিটার র্দীঘ র্যালিতেই প্রমাণিত হয়। ভোর থেকে মাঠ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট জটলা শুরু হয়। সময় গড়ানোর সাথে সাথে বাড়তে থাকে উপস্থিতি।
সকালে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের ম্যধদিয়ে অনুষ্ঠানমালার উদ্ধোধন করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক মুজিবুর রহমান সিআইপি শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে হীরক জয়ন্তীর উদ্ধোধন করেন। সকালে বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় অংশ নেন বিদ্যালয়ের একঋাঁক প্রাক্তন শিক্ষার্থী। সকাল ৯টায় শুরু হওয়া র্যালিতে প্রাণের উচ্ছ্বাস ফুটে উঠে।
মাতায় সাদা টুপি, গায়ে টি শার্ট জড়িয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেন নতুন পুরোনো শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ র্যালি বাঁশখালীর সর্বদক্ষিণের প্রেমবাজার ছুঁয়ে আবারো বিদ্যালয়ে এসে শেষ হয়। যে র্যালির বিশালতা সবাইকে চমকে দেয়। যেখান থেকে র্যালি শুরু হয়েছিল প্রেমবাজার ঘুরে ও উপস্তিতির সংখ্যায় স্কুল মাঠে স্থির ছিল একটি অংশ। মাঠে পুরানো বন্ধুদের কাছে পেয়ে অনেকেই সেলফি তোলে যেমন মিস করেনি তেমনি স্মৃতিতে ভাসিয়ে তুলেছিল সে সময়ের দিনগুলি। স্থৃতিতে রোমান্থন করে বই হাতে স্কুলে যাওয়া কিংবা দাপুটে শিক্ষকের চোখ রাঙানির কথাও।
পরে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ, আলোচনা সভা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, যাদু প্রদর্শনী, মঞ্চনাটক, কবিগানে দিনভর মুখর ছিল নাপোড়া সেখেরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রঙ্গাণ। কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বির্তক প্রতিযোগিতা উপস্থিত সবার মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগায়। এ পর্বে বক্তারা পক্ষে- বিপক্ষে নিজেদের প্রাণোচ্ছ্বল বক্তব্য তুলে ধরে বিচারক ও উপস্থিতদের কাছে দারুনভাবে প্রশংসিত হন। আর একজন বিচারক যখন বির্তক প্রতিযোগিতা বিচারক হন তখন অনুষ্ঠানের আয়োজনে আরো বেশি আনন্দ যুক্ত হন। পিরোজপুরের যুগ্ম ও দায়রা জেলা জজ মাহবুবুর রহমান বিতর্ক প্রতিযোগিতা প্রধান বিচারকের ভূমিকা পালন করেন। যার প্রণবন্ত উপস্থাপনা উপস্থিত দর্শকদের সত্যিহ আনন্দ দিয়েছে। কখনো চাঁটাগাইয়া, কখনো উত্তরবঙ্গের ভাষা বলে সবার সণিকৌটায় স্থান করে নেন তিনি। অনুষ্ঠানে রাজীব বাসাকের যাদুতে মুগ্ধ ছিল দর্শকরা। হাসিঠাট্টায় মাতিয়ে রাখেন বিদ্যালয় প্রাঙ্গাণ। মাঝেমধ্যে ছড়িয়েছিলেন আতঙ্কও। এ যেন যাদুর ভুবনে হারিয়ে গিয়েছিল বিদ্যালয় নবীন- প্রবীণ শিক্ষার্থীরা। শেষদিকে ছিল মঞ্চনাটক দিনবদলের পালা ও করিয়াল মো. ইউসুফ ও মান্নানের মনমাতানো পরিবেশনা। এর আগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ১৯৬৭ ব্যাচের ছাত্র অধ্যাপক জামাল উদ্দিন চৌধুরী। শুভোচ্ছা বক্তব্য রাখেন, নাপোড়া সেখেরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দিলীপ কুমার দে, প্রাক্তন ছাত্র অ্যাডভোকেট দিপংকর দে, দৈনিক পূর্বদেশের প্রকাশক শফিকুর রহমান, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আজিজুর রহমান, প্রাক্তন ছাত্র নিউটন ভাট্টচার্য্য, নাপোড়া সেখেরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম, ছনুয়া কাদেরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোসাইন শরীফ, ইজ্জতিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল হুদা সিদ্দিকী, বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ওমর ফারুক, সাবেক পৌর মেয়র কামরুল ইসলাম হোসাইনী, অধ্যাপক কমরুদ্দিন আহমদ, গন্ডামারা বড়ঘোনা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. হোসাইন, পুঁইছড়ি ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসাইন, প্রাক্তন ছাত্র মিহির কান্তি দেব সিকদার, জাকের হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সাধানপুর পল্লী উন্নয়ন উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষক ও প্রাক্তন ছাত্র সমীর দাশ, অঞ্জন দাশ, রাজীব গুহ প্রমুখ। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন হারক জয়ান্ত উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব বাবুল কুমার দেব ও অতনু ভট্টচার্য্য। উদ্ধোধনী বক্তব্যে দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মুজিবুর রহমান সিআইপি বলেন, আজ থেকে ৭২ বছর আগে শিক্ষাদীক্ষায় অনগ্রসর নাপোড়া সেখেরখীল বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠায় যারা ভূমিকা রেখেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা অত্র এলাকা থেকে অংশ নিয়েছেন তাঁদেরকে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আজকের দিনে আমরা যে বা যারা লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি তারা স্কুল ও শিক্ষকদের অবদানের কথা ভুলবো না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এলাকার শিক্ষাবিস্তারে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা যদি এগিয়ে না আসি, নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা দায়বদ্ধ থাকব। আসুন, আমরা সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আলোকিত প্রতিষ্ঠান গঠনে কাজ করি। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা- ক্ষুধা ও দারিদ্র্রমুক্ত সোনার বাংলা গঠনের যে ভিশন- ২০২১ তা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হই এবং নিরক্ষরমুক্ত বাঁশখালী গঠনে সবাই এগিয়ে আসি। পরে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ৩০ লক্ষ শহিদের মগফেরাত কামনা ও ৫ হাজার ছাত্র/ছাত্রী ও এলাকা বাসিকে আপ্যায়ন করা হয়।
No comments:
Post a Comment