ডিজিটাল জুয়া আইপিএল! - আমার বাঁশখালী ডটকম AmarBanskhali.Com

ব্রেকিং নিউজ

শীর্ষ বিজ্ঞাপন

নিউজ এর উপরে বিজ্ঞাপন

Tuesday, April 10, 2018

ডিজিটাল জুয়া আইপিএল!


আমার বাঁশখালী ডেক্স:
রাত তখন ৯টা। বহদ্দারহাট মোড় থেকে টমটমে করে আন্দরকিল্লায় যাচ্ছিলেন শফিউল। টমটমে উঠার পর তিনি খেয়াল করলেন তার পাশের সিটে বসা তিন যুবক নিজেদের অ্যান্ড্রয়েড ফোনে নিবিষ্টচিত্তে আইপিএলে চলা একটা ক্রিকেট ম্যাচে ডুবে আছেন। ফাঁকে ফাঁকে নিজেদের মধ্যে উৎকন্ঠিত আলাপ-আলোচনা করছেন। প্রতি বলে বলে তারা কখনও উল্লসিত হচ্ছেন, আবার কখনও বিমর্ষ হয়ে পড়ছেন। মাঝে মাঝে হতাশায় খিস্তিখেউড়ও করে উঠছিলেন। টমটমের বাকি যাত্রীরা তিন যুবকের কাণ্ডকারখানা অবাক হয়ে দেখছিলেন। ৭ এপ্রিল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) এর উদ্বোধনী দিনের ম্যাচে তখন চলছে মুস্তাফিজের মুম্বাই ইণ্ডিয়ানস বনাম চেন্নাই সুপার কিংসের খেলা। টস হেরে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস তখন ব্যাটিংয়ে নেমে ৫ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৬ রান তোলে। সাদাচোখে দেখলে যে কারও মনে হতে পারে, টমটমের ওই তিন ছেলে কতই না ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ, গাড়ির ভিড়েও ক্রিকেট থেকে চোখ সরাতে পারছে না একমুহূর্তের জন্য। হতে পারে দেশের ছেলে মুস্তাফিজ মুম্বাই ইণ্ডিয়ানসের হয়ে খেলছে বলে আইপিএলের প্রতিও এই টান। একটু পর শফিউলের ভুল ভাঙল যখন একটা ফোন কলে তিন যুবকের মধ্যে একজনকে বলতে শোনা গেল, ‘ভাই চেন্নাই সুপার কিংসের পক্ষে আমার ১০ হাজার ধরেন!’
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়া ফোনে কথা বলা তরুণের কাছে শফিউল কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান- আইপিএল নিয়ে নিলাম হওয়ার পর থেকে বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া কেন্দ্রিক একটি বাজিকর চক্রের সাথে যুক্ত হয়েছেন তারা কয়েক বন্ধু। উদ্বোধনী দিনের খেলা শুরুর মতিগতি দেখে তিনি চেন্নাইয়ের পক্ষে ১০ হাজার টাকা বাজি ধরেছেন, টাকা বিকাশেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অর্জন-বিসর্জনের হিসাব খেলা শেষে বাড়ইপাড়ায় গিয়েই হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন সন্ধ্যায় টিভির পর্দার সামনে খেলার দর্শকের মধ্যে যে ভিড় দেখা যায়, এর প্রতিটিই ছোটখাটো জুয়ার আসর। টিভি মানেই একটি জুয়ার বোর্ড। ম্যাচে জয়-পরাজয়, এক ওভারে কত রান, এক বলে কী হবে, কোন খেলোয়াড় কেমন খেলবে এমন সব কিছুর ওপরই হচ্ছে জুয়া। আইপিএল নিয়ে এই জুয়ার উন্মাদনা চলছে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে। প্রতি বলে দাম ওঠে ১০ থেকে ৫০০ টাকা। আর এক ওভারে তা গড়ায় ১০ হাজার থেকে এক লাখ পর্যন্ত। জুয়াতে মেতে ওঠাদের অধিকাংশই নিম্নআয়ের ও বেকার তরুণ যুবক। এদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়-য়া শিক্ষার্থীরাও। আইপিএল ম্যাচকে ঘিরে নগরীর বাকলিয়া, ডিসি রোড, চকবাজার, খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই, বহদ্দারহাট, বাড়ইপাড়া, খতিবের হাট, ফরিদের পাড়া, দেওয়ান বাজার, আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, সদরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত জুয়ার আসর বসছে।
বহদ্দারহাট থেকে বাড়ইপাড়া পর্যন্ত এক কিলোমিটার দূরত্বের সংকীর্ণ গলি পথে হেঁটে যেতে কিংবা রিকশায় যেতে যেতে দেখা যায় গলির উভয় পাশে রয়েছে বেশ কিছু জরাজীর্ণ চায়ের দোকান। সারা বছর এসব দোকানে তেমন ক্রেতা না থাকলেও এখন আইপিএল শুরুর পর থেকে সন্ধ্যার পর এসব দোকান জমজমাট হয়ে উঠে। একটা টেলিভিশন সেটের সামনে দেখা মিলে একদল মানুষের মধ্যে ক্রিকেট উন্মাদনা। কখনও কখনও সে ক্রিকেট উন্মাদনা কথা কাটাকাটি থেকে মারামারি পর্যন্ত গড়ায়। ক্রিকেট উন্মাদনার নামে আদতে এসব হল ক্রিকেট জুয়া।
একদিন আগে এই প্রতিবেদক বাড়ইপাড়ায় সরেজমিন গিয়ে নামহীন এক চায়ের দোকানে দেখতে পান বড় পর্দার রঙিন টেলিভিশনে চলছে আইপিএল এর একটি ক্রিকেট ম্যাচ। দর্শনার্থীতে ঠাসা দোকানটিতে ভেতরে জায়গা না পেয়ে অনেকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেলা উপভোগ করছেন। কোনমতে ভিড় ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, টিভি সেটের সামনে বসে আছেন দুই যুবক, দুজনের হাতেই মোবাইল এবং ল্যাপটপ। একটু পর পর তাদের মোবাইলের রিং টোন বেজে উঠছে। ল্যাপটপে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের নামে ছক আঁকা নামের পাশে বিভিন্ন ঘর বসানো হয়েছে। একেকটি ঘরে টাকার অংক বসানো। মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে টাকার পরিমাণ বলে দেয়া হয়, আর এক যুবক সেই ঘরে অংক বসিয়ে দেন। আইপিএল প্রতিদিনের খেলা শেষে চলে হিসাব-নিকাশ। কত টাকা জেতা হল আর কত হারা হল তা নিয়ে চলে দেন-দরবার।
আইপিএল ম্যাচ নিয়ে যেভাবে জুয়া হয়:
দোকানে মোবাইল-ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকা দুই যুবকের একজনের সাথে কথা বলে জুয়া ও টাকা লেনদেনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। বিশেষ কোন বোলার এক ওভারে কত রান দিবে কিংবা কয়টি উইকেট পাবে- তার উপর ধরা হয় বাজি। কেউ ১০০ টাকা বাজি ধরে জিতলে তাকে দেয়া হয় ২০০ টাকা, ১০ হাজার টাকার বিপরীতে পাবেন ২০ হাজার টাকা, অর্থাৎ যে টাকা বাজি ধরা হয় তার দ্বিগুণ পান বিজয়ী ব্যক্তি। বাজি ধরে হেরে গেলে সেই টাকা চলে যায় বাজিকরদের পকেটে। এভাবে প্রতি বল, রান, ওভার, উইকেট সবকিছু নিয়ে বিভিন্ন অঙ্কের টাকার খেলা চলে আইপিএল নিয়ে। এতে একদিনে কেউ কেউ লাখপতি হচ্ছেন আবার কেউ নিঃস্ব হয়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন।
পুলিশের বক্তব্য:
আইপিএল জুয়া নিয়ে কথা হলে চান্দগাঁও থানার ওসি মো. আবুল বাশার বলেন, নগরীর বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন জায়গায় আইপিএলের নামে যে রমরমা জুয়া চলছে সে ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আজও (গতকাল) কয়েক জায়গায় আমরা অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। যার বেশির ভাগই স্কুল-কলেজে পড়-য়া ছাত্রছাত্রী। আমরা তাদের আটক করার পর থানায় নিয়ে আসলে গার্ডিয়ানরা এসে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। তবে এদের চেয়ে আমরা এই জুয়াড়ি চক্রের মূল হোতাদের ধরার জন্য নিরন্তর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।সুপ্রভাত

No comments:

Post a Comment

পোস্টের নীচে বিজ্ঞাপন