আমার বাঁশখালী.কম.ডেক্স রিপোর্টার মোঃ রোবেল.
দিনে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত ২ কোটি টাকা
বাজেট পাশ হয়েছে গত ৩০ জুন। এরপর ১০ দিন চলে গেছে। অথচ মোবাইল ফোন অপারেটররা ইন্টারনেটের ভ্যাট এখনো কমায়নি। বাজেটে ইন্টারনেটের উপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এনবিআর থেকে বিশেষ আদেশও (এসআরও) জারি করা হয়েছে। কিন্তু ‘শব্দে’র মারপ্যাচে মোবাইল ফোন অপারেটররা গ্রাহকের পকেট কাটছে।
অপারেটরদের
কাছ থেকে পাওয়া হিসেবেই দেখা যায়, ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ভ্যাট বাবদ
প্রতিদিন অন্তত দুই কোটি টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অথচ
এই অতিরিক্ত টাকা সরকার পাবে না। অপারেটরদের পকেটেই থেকে যাবে। এ নিয়ে
গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি একটি
চিঠি দিয়েই দায় সেরেছে। তাদের চিঠির জবাব দেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেনি
অপারেটররা। টেলিযোগাযোগ
ও আইসিটি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এটা না কমানোর জন্য
মোবাইল অপারেটররা নানা ধরনের ফন্দিফিকির করছে। এটা তাদের করতে দেওয়া হবে
না। এনবিআর এসআরওতে কি লিখেছে সেটার চেয়ে বড় কথা অর্থমন্ত্রী নিজেই লিখে
দিয়েছেন ইন্টারনেট সেবার উপর ১০ শতাংশ ভ্যাট কমানো হল। এরপর আর কোন কথা
থাকতে পারে না। আসলে ইন্টারনেটের ভ্যাট থেকে মোবাইল অপারেটররা তাদের
খরচপাতির টাকাও রেয়াত সুবিধার নামে কেটে রাখত। এখন আর সেটা পারবে না, এই
কারণে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে। তারা যদি এটা না করে তাহলে
আমরা কঠোর অবস্থানে যাব। আমি অর্থমন্ত্রী ও এনবিআরের সঙ্গে কথা বলে এ
ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেয়া যায় সেটা ঠিক করব। সরকার সাধারণ মানুষকে যে
সুবিধা দিয়েছে সেটা নিয়ে তাদের তালবাহানা মেনে নেয়া হবে না।’
সংশ্লিষ্টদের
সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোন ক্ষেত্রে সরকার ভ্যাট বা সরচার্জ বাড়ালে
রাতের মধ্যেই সেটা কার্যকর হয়ে যায়। অথচ এগুলো কমানো হলে ‘শব্দের’
মারপ্যাচে বা নানা অযুহাতে এটা কমাতে মোবাইল ফোন অপারেটররা গড়িমসি করে।
একইভাবে এবার বাজেটে ইন্টারনেটের উপর ভ্যাট কমানো হলেও সেটার বাস্তবায়ন ১০
দিনেও হয়নি। অন্যদিকে আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) অপারেটররা
বলছে, রেয়াত সুবিধা না থাকায় তাদের পক্ষে ইন্টারনেটের দাম কমানো সম্ভব না।
ফলে ‘গ্যাড়াকলে’ পড়ে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে গ্রাহকদের। মোবাইল
অপারেটররা বলছে, এনবিআর সিদ্ধান্ত দিলেই তারা বাস্তবায়ন করবেন।
এনবিআরের
একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যে নামেই অভিহিত করা হোক না
কেন, যেহেতু মোবাইল ফোন অপারেটররা ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে, সেজন্য তারা
‘ইন্টারনেট সেবা সংস্থা’র আওতাভুক্ত। এজন্য তাদের গ্রাহকরাও এ সুবিধা
পাবেন। আজকালের মধ্যেই এ বিষয়ে এনবিআরের পক্ষ থেকে একটি স্পষ্টিকরণ জারি
করা হবে।
সূত্র
জানিয়েছে, মোবাইল অপারেটররা যে সব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইন্টারনেট সেবা
ক্রয়ের বিনিময়ে যে ভ্যাট দিচ্ছে, সেটি রেয়াত নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু ১৫
শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ নামিয়ে আনায় তাদের এ সুবিধা থাকছে না। এনবিআরের ওই
কর্মকর্তা বলেন, রেয়াত পাক বা না পাক- গ্রাহক পর্যায়ে এটি কার্যকর করতে
হবে। তবে রেয়াতের সঙ্গে যে অর্থ জড়িত, তা খুব বেশি নয়।
ইন্টারনেটে
১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাব জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের
বাজেটে পাস হবার পর ৩০ জুন রাত ১২টার পর থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু
গত ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও আগের মতো ১৫ শতাংশ ভ্যাটই কেটে যাচ্ছে অপারেটররা।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন এমটবের পক্ষ থেকে আগে বলা হয়েছে, ইন্টারনেটের
ভ্যাট বাবদ সরকারকে তারা বছরে অন্তত ১১/১২শ’ কোটি টাকা পরিশোধ করেন।
এই
তথ্যকে সঠিক হিসেবে ধরলে প্রতি মাসে অন্তত একশ’ কোটি টাকা তারা ভ্যাট দেন।
প্রতিদিন সেটার পরিমান তিন কোটি টাকারও বেশী। ১৫ শতাংশ ভ্যাটে তিন কোটি
হলে ১০ শতাংশ ভ্যাটে সেটা হওয়া কথা দুই কোটি টাকা। সেখানে প্রতিদিন অন্তত
দুই কোটি টাকারও বেশী তারা গ্রাহকের কাছ থেকে কেটে নিচ্ছে। সরকার ভ্যাট
কমানোর ফলে এই টাকা এখন নিতেও পারবে না। সব টাকাই যাবে অপারেটরদের পকেটে।
মাঝে পড়ে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়লেন গ্রাহকরা।
বাজেট
পাশের পরদিনই মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন এমটবের (এসোসিয়েশন অব মোবাইল
টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ) মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির এনবিআরের একটি
চিঠি দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, ইন্টারনেটে ৫ শতাংশ ভ্যাটের যে
প্রজ্ঞাপন তাতে এটি ‘ইন্টারনেট সংস্থার’ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। মোবাইল ফোন
অপারেটরগুলো যেহেতু ইন্টারনেট সংস্থা নয় তাই তারা এর মধ্যে পড়েন না। এ
বিষয়ে তিনি এনবিআরের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছেন। বিষয়টি পরিষ্কার না হওয়া
পর্যন্ত ভ্যাটের বিষয়ে তারা কিছু করতে পারছেন না বলেও সাফ জানিয়েছেন। গতকাল
মঙ্গলবার পৃথকভাবে মোবাইল ফোন অপারেটরদের শীর্ষ
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারাও একই কথা বলেন।
অন্যদিকে
গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র
নেতারা বলছেন, ভ্যাট কমালেও এখন রেয়াত সুবিধা না পাওয়ায় গ্রাহক পর্যায়ে
তারা ইন্টারনেটের দাম কমাতে পারবেন না। ভ্যাটের হিসাবে গ্রাহকের কাছ থেকে
এখন ৫ শতাংশ নিলেও ইন্টারনেটের সেবা দেয়ার প্রক্রিয়ায় তাদের খরচ আরও বেড়ে
যাবে।
এদিকে
বাজেট পাশ হওয়ার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি থেকে অপারেটরগুলোকে চিঠি
পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইন্টারনেটের ভ্যাট কমানোর বিষয়ে অগ্রগতি
তাদের জানাতে। অথচ প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও বিটিআরসির সেই চিঠির কোন জবাব
অপারেটরগুলো দেয়নি। এমটব এনবিআরকে যে চিঠি দিয়েছে তার একটা অনুলিপি
পাঠিয়েই তারা দায়িত্ব শেষ করেছে। বিটিআরসির একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা
অপারেটরদের এই কার্যকলাপকে ঔদ্ধত্য হিসেবেই দেখছেন। তারপরও বিটিআরসি কোন
ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
গ্রামীণফোনের
একজন গ্রাহক জানিয়েছেন, বাজেটে ৫ শতাংশ ভ্যাট করার পরও তার কাছ থেকে ১৫
শতাংশ ভ্যাটেই ইন্টারনেট বিক্রি করছে গ্রামীণফোন। গত ১০ দিন ধরেই যে ১৫
শতাংশ করে ভ্যাট নেয়া হচ্ছে এই টাকা সরকারের কোষাগারে কিভাবে যাবে? সরকার
তো ভ্যাট ৫ শতাংশ করে দিয়েছে তাহলে অপারেটরগুলো কেনো এখনও ১৫ শতাংশ করে
নিচ্ছে। এটি দেখার কি কেউ নেই?
No comments:
Post a Comment