আমার বাঁশখালী ডেস্ক:
দেশে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। নারীদের পাশাপাশি পুরুষেরাও আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ক্যান্সারে। মূলত অপরিবর্তনযোগ্য এবং পরিবর্তনযোগ্য কারণে এ ক্যান্সারে হয়ে থাকে।
অপরিবর্তনযোগ্য কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
জেনেটিক কারণ, বংশগত কারণ, এস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাব।
লিঙ্গভেদে ক্যান্সারে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ে। একজন নারী পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকেন। মহিলাদের মাসিক শুরু এবং বন্ধের বয়সের ওপরেও এই রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি নির্ভর থাকে। যাদের ১২ বছর বয়সের পূর্বে মাসিক শুরু এবং ৫০ বছর বয়সের পর মাসিক বন্ধ হয় তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
বয়স বাড়ার সাথে স্তন ক্যান্সারের আক্রান্তের সম্ভাবনা বাড়ে বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সের পর এই ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়, যা পরিবর্তন যোগ্য নয় মোটেও।
পরিবর্তনযোগ্য কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
অনেক বেশি বয়স পর্যন্ত বিয়ে না করা, সন্তানকে নিয়মিত বুকের দুধ না খাওয়ানো, অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাওয়া, অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া এবং শারীরিক পরিশ্রম একেবারেই না করা, দীর্ঘদিন এয়ার ফ্রেশনার, কীটনাশক, অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত কসমেটিক, ডিওডোরেন্ট এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থের সংস্পর্শে থাকা।
আমেরিকান সোসাইটি অব ব্রেস্ট সার্জন সম্প্রতি জানিয়েছে, পুরুষের স্তন ক্যান্সার নারীর তুলনায় দেরীতে শনাক্ত করা যায় এবং এটা মারাত্মক হয়ে থাকে।
স্তন ক্যান্সারের সতর্কতাসূচক লক্ষণ: স্তন কিংবা বুকে ব্যথা, স্তনে চুলকানি, পিঠের উপরের দিকে, কাঁধে কিংবা ঘাড়ে ব্যথা, স্তনের আকার পরিবর্তন, স্তনবৃন্তে পরিবর্তন কিংবা সংবেদনশীলতা, বগলে পিন্ড কিংবা ফোলাভাব, লাল, ফোলা স্তন।
রোগ নির্ণয়:
রোগ নির্ণয়ের মূল পরীক্ষা হচ্ছে, অনুভূত চাকা বা দলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে হিস্টো বা সাইটোপ্যাথলজি পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার কোষের উপস্থিতি শনাক্তকরণ। নমুনা সংগ্রহের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে সূক্ষ্ম সুই ফুটিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা এখন বিশ্বজুড়ে আধুনিক পদ্ধতি হিসেবে প্রচলিত আছে। এই পরীক্ষা পদ্ধতিকে ইংরেজিতে বলা হয় FNAC. এই FNAC পরীক্ষা নির্ভুল করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করার সময় আল্ট্রাসনোগ্রাফির সহায়তা নেয়া যেতে পারে।
নমুনা সংগ্রহের আগে ক্ষেত্রবিশেষে স্তনের বিশেষ ধরনের X-ray ম্যামোগ্রাফি কিংবা আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে চাকা বা দলার কিছু বৈশিষ্ট্য যাচাই করা যেতে পারে, যা রোগ নির্ণয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে মাত্র।
ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর বয়সের নিচের মহিলাদের হাই রেজুলেশন আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা উত্তম ও নিরাপদ। তা ছাড়া ভালো আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেমোগ্রাফি থেকে বেশি তথ্য প্রদানে সক্ষম।
চিকিৎসা:
সুনিশ্চিতভাবে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় হলে সঠিক চিকিৎসা নির্ভর করে কিছু বিষয়ের ওপর। বিষয়গুলো হলো- রোগীর বয়স, ক্যান্সারের আকার-আকৃতি ও অবস্থান, ক্যান্সারের পর্যায় ও বিস্তৃতি, বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাপ্রাপ্যতার সুযোগ এবং সর্বোপরি রোগীর ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও পছন্দ ইত্যাদি।
আধুনিক বিশ্বে স্তন ক্যান্সার চিকিৎসার পরিকল্পনা করা হয় সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এবং সে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করেন ব্রেস্ট সার্জন, অনকোলজিস্ট, রেডিও থেরাপিস্ট, প্লাস্টিক সার্জন ও ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী নিজে। সব বিষয় বিবেচনা করে একটি সুষ্ঠু চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়, যা সমন্বিতভাবে কিংবা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হয়। চিকিৎসার বিভিন্ন পন্থা হলো অস্ত্রোপচার, ক্যামোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, হরমোনথেরাপি।
প্রাথমিক পর্যায়, অর্থাৎ স্তন ক্যান্সার শুধু স্তন কিংবা স্তনসংলগ্ন বগলের লসিকাগ্রন্থির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চিকিৎসার প্রথম ও মৌলিক ধাপ হিসেবে অস্ত্রোপচার সর্বজনস্বীকৃত। এই অস্ত্রোপচার স্তন সংরক্ষণ করে শুধু টিউমার অপসারণ ও বগলের লসিকাগ্রন্থির নমুনা সংগ্রহ কিংবা টিউমারসহ সমস্ত স্তন কর্তন এবং সেই সাথে বগলের লসিকাগ্রন্থির নমুনা সংগ্রহ বা লসিকাগ্রন্থিগুলোর অপসারণ হতে পারে।
প্রতিকার:
স্তন ক্যান্সার প্রতিকার বা প্রতিরোধ করতে হলে আগে উল্লিখিত কারণ গুলোর মধ্যে যেগুলো পরিহার বা পরিত্যাগ করা যায় তা পালন করা। তবে সত্যিকার অর্থে প্রাথমিক প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা হয়তো সম্ভব নয়। তাই প্রাথমিক প্রতিকারের চেয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়কেই মূলত প্রাধান্য দেয়া উচিত। যারা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি গোত্রের পর্যায়ে পড়েন, তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও নিয়মিতভাবে যথাযথ পদ্ধতিতে নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করা উচিত এবং সে পরীক্ষায় সন্দেহজনক কিছু মনে হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।
No comments:
Post a Comment