আমার বাঁশখালী.কম.ডেক্স রিপোর্টার মোঃ রোবেল.
ঈদুল
আজহার তারিখ এখনো নির্ধারিত হয় নি। তবে ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল
থেকে নগরীর পশুর হাটগুলোতে গরু নিয়ে আসতে শুরু করেছেন বেপারিরা। এবার
চাহিদার বিপরীতে স্থানীয়ভাবেই পর্যাপ্ত কোরবানি পশুর যোগান আছে। সাথে
প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গরু আসায় সংকট থাকবে না। ফলে দামও থাকবে নাগালের
মধ্যে। এক্ষেত্রে পথের ‘চাঁদাবাজি’ এবং বাজারগুলোর ‘খুঁটি বাণিজ্য’
নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মূল্য আরো অধিক সহনীয় হবে বলেই জানিয়েছেন বেপারিরা।
এদিকে নগরীর পশুর হাটগুলোকে ঘিরে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), জেলা
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং পুলিশ প্রশাসন। এরমধ্যে চসিকের পক্ষে
বাজারগুলোতে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের
পক্ষে নগরীর বাজারগুলোতে ৫ থেকে ১০ সদস্যের করে ভেটেরিনারি টিম থাকবে।
খোলা হবে কন্ট্রোল রুমও। বাজারগুলোতে জাল নোট শনাক্তকরণে স্থাপন করা হবে
ব্যাংক বুথ। জেলা পুলিশের পক্ষেও থানা, ট্রাফিক
ও হাইওয়ে পুলিশ কিংবা তাদের এজেন্টের মাধ্যমে গবাদি পশুবাহী কোন গাড়ি
থামিয়ে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন।
নগর পুলিশও দুই একদিনের মধ্যে তাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে
জানাবে। পাশাপাশি বাজারের ইজারাদাররা জানিয়েছেন, খুঁটি নিয়ে কোন বাণিজ্য হবে না। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এস্টেট শাখা সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে
স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৮টি গরুর বাজার আছে। ইতামধ্যে এসব বাজারে ইজারাদার
নিয়োগ দিয়েছে চসিক। এর মধ্যে স্থায়ী বাজার আছে দুটি এবং বাকি ছয়টি বাজার
হচ্ছে অস্থায়ী। তবে কোরবান উপলক্ষে স্থায়ী এবং অস্থায়ী বাজারগুলোতে প্রথম
জিলহজ্ব থেকে ১০ জিলহজ্ব পর্যন্ত টানা কোরবানির পশুর বিকিকিনি চলবে। দুটি
স্থায়ী বাজারের মধ্যে বিবিরহাট বাজার প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এবং সাগরিকা
গরুর বাজার প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার বসলেও কোরবান উপলক্ষে এসব বাজারও
প্রতিদিন বিকিকিনি হবে।
কোরবান উপলক্ষে যে অস্থায়ী ছয়টি বাজারে টানা ১০ দিন কোরবানির পশু বিক্রি হবে সেগুলো হচ্ছে– কর্ণফুলী পশুর বাজার (নূর নগর হাউজিং), সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন স্থান (ইজারাদার কর্তৃক নিজ উদ্যোগে জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে), স্টিলমিল পশুর বাজার, পতেঙ্গা সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ (কাঠগড়) পশুর বাজার, পোস্তার পাড় স্কুল মাঠের ছাগল বাজার এবং কমল মহাজন হাট পশুর বাজার।
চাঁদা ও খুঁটি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ হলেই দাম কমবে : সংকট
না থাকলেও দামের ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি এবং বাজারগুলোতে নিয়ন্ত্রণহীন খুঁটি
বাণিজ্যের মাশুল গুণতে হতে পারে সাধারণ ক্রেতাদের। নাম প্রকাশ না করার
শর্তে বিবিরহাটের একজন গরু বেপারি দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন, ‘মহাড়কে
কয়েক জায়গায় চাঁদবাজদের উৎপাত আছে। পথে যদি চাঁদা দিতে হয় সেক্ষেত্রে তা
আমরা গরুর মূল্যের সঙ্গেই যোগ করা হবে। কারণ আমরা তো নিজ পকেট থেকে ওই টাকা
দিব না। এখন ওই চাঁদার বাড়তি খরচ বহন করতে না হলে স্বাভাবিকভাবেই গরুর দাম
কমবে।’
কয়েকজন গরু ব্যবসায়ি বলেছেন, প্রতিবছর কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ইজারাদারদের পক্ষ থেকে স্থাপিত খুঁটির (ব্যবসায়ীদের ভাষায় খাইন। আকারভেদে এসব খাইনে ৯ থেকে ১৫টি গরু রাখা যায়) মাত্রাতিরিক্ত
দাম আদায় করা হয়। ফলে মূল দামের সাথে অতিরিক্ত খরচের লাগাম টেনে ধরতে
বাড়ানো হয় গরুর মূল্য। যদিও এইক্ষেত্রে ইজারাদারগণ হাছিলের অর্থই নিতে
পারেন। কিন্তু তবু তারা খুঁটির মূল্য নেয়। এটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও এবার
কোরবানির পশুর মূল্য কমবে।
বাজার পরিস্থিতি : নগরীর ৮টি পশুর হাটের মধ্যে সাগরিকা গরুর বাজারে (স্থায়ী) ইতোমধ্যেই
প্রচুর গরু এসেছে। গতকালও ট্রাকে ট্রাকে করে আসতে দেখা গেছে। নগরীর আরেক
গুরুত্বপূর্ণ বিবিরহাট বাজরে গরুর সংখ্যা কিছুটা কম। তবে সেখানে হিন্দু
ধর্মাবলম্বীদের আসন্ন মনসা পূজাকে ঘিরে প্রচুৃরন পাঁঠা বিক্রি হতে দেখা
গেছে। এদিকে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে নূর নগর হাউজিংস্থ
কর্ণফুলী গরুর বাজারের। অন্যান্য বাজারগুলোতেও আসতে শুরু করেছে কোরবানির
পশু।
সাগরিকা গরুর বাজারের ইজারাদার মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘চট্টগ্রামের
আকর্ষণীয় এবং সাধারণ মানুষের পছন্দের গরুর বাজার সাগরিকা। চট্টগ্রাম সিটি
কর্পোরেশনের নির্ধারিত জায়গা ছাড়াও আশেপাশের ১২টি জায়গা ভাড়া নিয়েছি, সেখানে বাজার বসবে। ইতোমধ্যে প্রচুর গরু এসেছে বাজারে। প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে করে গরু ঢুকছে বাজারে। নাটোর, নওগাঁ, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, যশোর থেকে গরু আসছে। ভারতীয় গরুও আসছে, তবে সেটা সংখ্যায় কম।’ ‘বেপারিদের পক্ষে পথে পথে চাঁদাবাজির কোন অভিযোগ আছে কি না’ জানতে চাইলে সাগরিকা পশুর হাটের এ ইজারাদার বলেন, ‘না না, এবার এখন পর্যন্ত তেমন কোন অভিযোগ পাওয়া যায় নি।’
কোরবানি উপলক্ষে বাজারের সামগ্রিক প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করছে। ক্রেতা–বিক্রেতা সবার নিরাপত্তার বিষয়ে ইতোমধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। আগামী সোমবারও পুলিশ, র্যাবসহ সভা হবে। এছাড়া পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, পনিসহ সবকিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ এবার গরুর দাম কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেপারিরা বলেছেন, তাদের কস্ট বেশি। তাই একটু বেশি হতে পারে।’
No comments:
Post a Comment