(ফাইলফটো) |
অন্যদিকে ফৌজদারি আইনে করা বিভিন্ন রাজনৈতিক পুরানো মামলায় নতুন করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের নাম সংযুক্ত করার হিড়িক পড়েছে। পাশাপাশি নতুন করে রিমান্ডে নেয়ার হারও গত কয়েক মাসে উলেস্নখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এ ঘটনা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যস্ত্ম করে তুলেছে। আর এ সুযোগে পেশাদার অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অপরাধ পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।বিষয়টি স্বীকার করে থানা পুলিশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের ক্ষমতার মেয়াদের শেষ সময়ে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। তাই এ পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ আগেভাগেই তৎপরতা বাড়িয়েছে। বিশেষ করে অস্ত্রধারী পলিটিক্যাল ক্যাডাররা যাতে নির্বাচনী মাঠে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে এজন্য রাজনৈতিক মামলাগুলো গুরম্নত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। তবে শুধু সরকারবিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক মামলার ব্যাপারে তৎপরতা বাড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন তারা।যদিও সরেজমিন অনুসন্ধানে এ ব্যাপারে ভিন্ন চিত্র পাওয়া গেছে। থানা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সব ধরনের মামলাই থানায় ফাইলচাপা পড়ে আছে। এমনকি তাদের বিরম্নদ্ধে রম্নজুকৃত ফৌজদারি মামলার তদন্ত্মও চলছে ঢিমেতালে। অথচ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীর সব ধরনের মামলার তালিকা করে এর কোনটি কোন অবস্থানে আছে তা যাচাই করা হচ্ছে। যেসব মামলা তদন্ত্ম পর্যায়ে থমকে আছে তা দ্রম্নত গুটিয়ে এনে চার্জশিট দেয়ার জন্য সংশিস্নষ্ট তদন্ত্মকারী কর্মকর্তাকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা জামিনে থাকলে তা বাতিলের জন্য আইনি লড়াই চালানোর নির্দেশ দিয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ওয়ারেন্ট মাথায় নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের যেসব নেতাকর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের গ্রেপ্তারের জন্য সর্বোচ্চ তৎপরতা চালাতে বলা হয়েছে।
এদিকে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরম্নদ্ধে একের পর এক নতুন মামলা দায়েরেরও হিড়িক পড়েছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বিরোধী দলগুলো শক্ত অবস্থানে রয়েছে, সেখানে এ তৎপরতা বেশি চলছে। সেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলেই বিএনপি-জামায়াতের স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের আসামি করে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করছে। কখনো আবার সাধারণ মানুষকে দিয়ে মিথ্যা মামলাও করানো হচ্ছে। যা বিভিন্নভাবে ফাঁস হওয়ায় জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং আইনজীবীসহ আদালতের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যখন যেখানে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি চাঙ্গা হচ্ছে, তখন সেখানে নতুন করে রাজনৈতিক মামলা রম্নজু এবং পুরনো মামলায় নতুন করে আসামি সংযুক্তের ঘটনা বেড়েছে। যদি তাদের বড় অংশের বিরম্নদ্ধেও পুলিশ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেখাতে পারেনি।
এর মধ্যে গত ফেব্রম্নয়ারি মাসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে পুলিশ সারা দেশে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষকে জেলে ঢুকিয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় তিন হাজার ব্যক্তিকে পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এসব মামলার এজাহারে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বড় অংশের নাম ছিল না। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ শুধুমাত্র ঢাকাতে অন্ত্মত আড়াইশ ব্যক্তিকে রিমান্ডে নেয় বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
যদিও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা মূলত ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় নাশকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখন এই সময়ে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর অভিযোগপত্র দিতে শুরম্ন করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজনৈতিক মামলার বাড়তি চাপে উচ্চ আদালতসহ প্রায় সব আদালতেরই স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। আদালত সংশিস্নষ্টরা জানান, নিয়মিত মামলার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনাই যেখানে দুষ্কর, সেখানে অসংখ্য রাজনৈতিক মামলা নিয়ে আদালতগুলোকে মাত্রাতিরিক্ত ব্যস্ত্ম থাকতে হচ্ছে। এতে সাধারণ মামলার সময়মতো শুনানি না হওয়ায় বিচার প্রার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি এতে মামলা পরিচালনা ব্যয়ও বাড়ছে।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী শিবিরের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক মামলা নিয়ে ব্যস্ত্ম থাকলেও এ সময়ে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্ত্মরীণ কোন্দলে ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে দেশে রাজনৈতিক হানাহানিতে ৩৪ জন নিহত এবং ১ হাজার ৮০৪ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু এপ্রিল মাসেই রাজনৈতিক গোলযোগে ১১ জন নিহত হন। যার ৮ জনই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্ত্মরীণ সংঘর্ষে মারা যান। এ সময়ে দলটির অভ্যন্ত্মরীণ কোন্দলে আহত মানুষের সংখ্যা ৩২৭। মার্চ মাসে আওয়ামী লীগের অভ্যন্ত্মরীণ গোলযোগের ঘটনা ঘটেছে ২৬টি। আর বিএনপির মাত্র ১টি।
অন্যদিকে বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত্ম চার মাসে ক্রসফায়ারে ৬৯ জন নিহত হয়েছে। একই সময় গুমের শিকার হন ১৪ জন।
চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ এই তিন মাসে ১৭৬টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রম্নয়ারি মাসে ৫৫টি করে এবং মার্চ মাসে ৬৬টি শিশু ধর্ষণের ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এপ্রিল মাসেও ধর্ষণের সংখ্যা অর্ধশতের কোটা ছাড়িয়েছে। গড়ে এই চার মাসের শিশু ধর্ষণের সংখ্যা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি বলে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম দাবি করেছে। এ সংগঠনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম তিন মাসে ধর্ষণের শিকার ১৭৬টি শিশুর মধ্যে ২০টি শিশুই গণধর্ষণের শিকার হয়। এ সময় ২৫ শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় এবং তিনটি শিশু ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ২১টি শিশুকে। সবচেয়ে বেশি শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে প্রশাসনের কেন্দ্রস্থল ঢাকা জেলাতেই।
এদিকে শিশু ধর্ষণকারী তিনজন ক্রসফায়ারে মারা গেলেও এ সংক্রান্ত্ম মামলাগুলোর বেশিরভাগেরই তদন্ত্ম চলছে ঢিমেতালে। গণধর্ষণের আসামিরা অনেকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং বাদীপক্ষকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে বলেও বিস্ত্মর অভিযোগ রয়েছে। (যায়যায়দিন)
No comments:
Post a Comment