আমার বাঁশখালী.কম.ডেক্স রিপোর্টার মোঃ রোবেল.
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে বানের স্রোতের মতো বন্দরনগর চট্টগ্রাম ছাড়ছে
মানুষ। সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথে গতকাল সোমবার সবচেয়ে বেশি মানুষ চট্টগ্রাম
ছেড়েছেন। বিশেষ করে অফিস-আদালত ছুটির পর বিকেলেই ভিড় বেশি ছিল। সড়ক এবং
রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলো ছিল লোকে লোকারণ্য। বাস ও ট্রেনে অতিরিক্ত
যাত্রী। নির্দিষ্ট আসনের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে এবং ঝুঁকি নিয়ে ছাদেও উঠেছেন
অনেকে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে নাড়ির টানে বাড়ি যেতে বাস ও ট্রেনে গাদাগাদিসহ
নানা দুর্ভোগ থাকলেও সবার মুখে ছিল আনন্দের ঝিলিক। সড়কপথে বিভিন্ন স্থানে
যানজট এবং রেলপথে বিভিন্ন ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে ট্রেনের গতি
অঘোষিতভাবে কমানো হয়েছে। তবে ট্রেনের সিডিউল ঠিক থাকলেও সড়কে ভোগান্তি ছিল
বেশি। যাঁরা গতকাল যাননি তাঁদের অনেকে আজ মঙ্গলবার রাতের মধ্যে বাড়ি চলে
যাবেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
আগামীকাল বুধবার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বানের স্রোতের মতো মানুষ বাড়ি
যাচ্ছেন। একইভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে ঈদ করতে চট্টগ্রাম
আসছেন। গত কয়েকদিন সড়ক, রেল, আকাশ ও নৌপথে কয়েকলাখ মানুষ বাড়ি গেছেন বলে
বিভিন্ন তথ্যে জানা গেছে।
এদিকে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে নগরের বিভিন্ন এলাকা। সড়কগুলোতে আগের মতো
মানুষের ভিড় নেই। যানজটের চিরচেনা রূপ কমতে শুরু করেছে। বাস-রেলষ্টেশনে ভিড়
থাকলে বিভিন্ন এলাকা ফাঁকা হয়ে আসছে।
গতকাল নগরের রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও বিভিন্ন বাস স্ট্যাণ্ডে গিয়ে
দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে বাড়ি যাওয়ার জন্য সর্বত্র উপচেপড়া ভিড়। সড়কপথে
গণপরিবহন না পেয়ে অনেকে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে বাড়ি যাচ্ছেন। মোড়ে
মোড়ে যানজটের কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
সকাল ১১ টায় বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন হাজারো
মানুষ। কিন্তু গণপরিবহন কম। এ সময় কিছুক্ষণ পর পর কোনো গণপরিবহন সেখানে
আসলে মুহূর্তে হুমড়ি খেয়ে পড়েন যাত্রীরা।
ফোরকান উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কালুরঘাট থেকে এখানে
(বাস টার্মিনাল) আসতে দেড় ঘণ্টা লেগেছে। বিভিন্ন জায়গায় যানজট। বন্দরটিলা
যেতে ১০ নম্বর গাড়ির জন্য আধঘণ্টা হয়ে গেছে কিন্তু গাড়ি পাচ্ছি না। সিএনজি
অটোরিকশা অন্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া চাচ্ছে।’
কাপ্তাই যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষা করছেন আনিস নামক এক যুবক। তিনি বলেন,
‘অলঙ্কার মোড় থেকে এখানে এসেছি দেড় ঘণ্টা হচ্ছে। টিকিট নিয়েছি। কিছুক্ষণ
পর গাড়ি আসবে বলছে। কিন্তু আধা ঘণ্টা হয়ে গেছে। এখনো আসেনি।’
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহ আমানত সেতু এলাকায় ঈদে বাড়ি যাওয়া মানুষ
বেশি কষ্ট পাচ্ছে। ওই এলাকা থেকে মানুষ দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও
বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করেন। গণপরিবহনের অভাবে অনেকে ট্রাকে
দাঁড়িয়ে ও বসে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন। কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে বেশি। এছাড়া
বিভিন্ন গণপরিবহনেও অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ ওঠেছে।
এ ছাড়া নগরের অক্সিজেন, বায়োজিদ বোস্তামি, কর্নেলহাট, অলংকার, বিশ্বরোড
মোড়, বিআরটিসি, ইপিজেড, কদমতলী, দামপাড়া, বহদ্দারহাট মোড়, সিনেমা প্যালেস,
বন্দরটিলা এলাকায় বিভিন্ন অস্থায়ী স্টেশনে দূরপাল্লার বাসের জন্য হাজার
হাজার যাত্রী। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে যানজটের কারণে
বাসস্টেশনের কাউন্টারে আসতে দেরি হওয়ায় যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন
বেলাল গতকাল সোমবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজকে (সোমবার) সবচেয়ে বেশি
মানুষ চট্টগ্রাম থেকে গেছেন। অফিস ছুটির পর সড়কে চাপ বেড়ে গেছে। এবারের ঈদে
সড়কপথে ৫ লক্ষাধিক লোক দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে গেছেন। সোমবার যাঁরা যাননি
তাঁরা মঙ্গলবার যাবেন। গণপরিবহন সংকটের কারণ হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায় যাত্রী
নিয়ে অনেক গাড়ি চলে গেছে।’
এর আগে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মঞ্জুরুল আলম
চৌধুরী মঞ্জু বলেন, ‘উত্তর চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায়
নগরের অক্সিজেন থেকে সোমবার ৭০০ গাড়িতে ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার যাত্রী
বাড়ি গেছেন। এসব রুট দিয়ে গত কয়েকদিনে প্রায় দেড় লাখ মানুষ বাড়ি গেছেন। গত
ঈদের চেয়ে এবার মানুষ বাড়ি বেশি গেছেন।’
চট্টগ্রাম রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, এবার ঈদে গত ৪ দিনে গড়ে ১৫ থেকে
১৭ হাজার যাত্রী চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন
গন্তব্যে গেছেন। সব মিলে এবার ঈদে লক্ষাধিক যাত্রী রেলপথে যেতে পারেন।
নিরাপদ যাত্রার লক্ষ্যে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঢাকা, চট্টগ্রাম,
সিলেট, ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেনের গতি ২০
থেকে ২৫ কিলোমিটার কমানো হয়। এতে করে গতকাল বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছতে কয়েকটি
ট্রেনের ২-৩ ঘণ্টা বেশি সময় লেগে যায়। কিন্তু বাড়ি যেতে পারায় ট্রেন
যাত্রীরাও খুশি। পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন ট্রেনে সময়সূচি ভেঙে পড়ায় যাত্রীরা
অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হলেও পূর্ব রেলে সে রকম কোনো সমস্যা হয়নি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে
বলেন, ‘আজকে (গতকাল) বেশি চাপ ছিল ট্রেনে। কিন্তু সব ট্রেন নির্ধারিত
সময়সূচি অনুযায়ী চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে গেছে। এবার ঈদে রেলপথে চট্টগ্রাম থেকে
প্রায় লাখখানেক যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন। যাত্রীরা যাতে ভালো সেবা
পান সে ব্যাপারে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।’
এ ছাড়া চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিমানে এবং নৌপথেও গতকাল অনেকে বাড়ি গেছেন। নেট সূত্র..........
No comments:
Post a Comment