![]() |
আমার বাঁশখালী ডেক্স:
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদী দখল করে চলছে বরফ
কল নির্মানের কাজ। গত কয়েকদিন ধরে একটি মহল স্ক্যাবেটর দিয়ে কর্ণফুলী নদীর
তীর কেটে মাটি সমান করছে। নগরীর নতুন ফিশারিঘাট এলাকায় রাত দিন সমানে চলছে
স্ক্যাবেটর দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে স্ক্যাবেটর দিয়ে মাটি কেটে নদীর তীর ভরাট করা হচ্ছে।
সেখানে উপস্থিত মাঝি মাল্লারা জানান, কারা
মাটি কেটে নদী ভরাট করছে তা জানিনা। তবে শুনেছি এখানে বরফকল বানানো হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানদার বলেন এখানে বেশ কিছু ভ্রাম্যমান
দোকান রয়েছে। কিছু লোক এসে এসব দোকান ভেঙ্গে দেয়া হবে বলে যায়।
এমনিতেই দখল আর দুষনে অনেকটা সরু হয়ে গেছে
চট্টগ্রামের প্রান প্রবাহ কর্ণফুলী নদী। তার পরও থেমে নেই দখল। প্রতি নিয়ত
চলছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান আর সমিতির নামে নদী ভরাট। দিন দুপুরে এভাবে
নদী ভরাট করা হলেও এ নিয়ে কোন পক্ষের কোন মাথা ব্যাথা নেই। এর আগে নদীর
তীর দখল করে নির্মান করা হয়েছে নতুন ফিশারি ঘাট। তার পাশেই এখন নির্মান
করার হচ্ছে বরফ কল।

এ জন্য ভরাট করা হচ্ছে নদীর তীর।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী মৎসজীবি লীগের সহ সভাপতি ও চট্টগ্রাম সোনালী যান্ত্রিক
মৎস সমবায় সমিতির সভাপতি আমিনুল হক সরকার বাবুলের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা
হলে তিনি বলেন, সব কথা বলা যায়না, সব সময় বক্তব্যও দেয়া যায়না। কারা
কর্ণফুলী নদী ভরাট করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এটি জেলা মৎস
অধিদপ্তর করছে।
তবে আপনারা লিখলে তো আমাদের বারোটা বাজবে।
জাতীয় নদী কর্ণফুলী রক্ষা পরিষদের নেতা সাংবাদিক সরোয়ার আমিন বাবু বলেন,
এমনিতেই দখলে অনেকটা সরু হয়ে গেছে কর্ণফুলী নদী। এর পরেও চলছে নদী দখল।
তিনি বলেন নদীর পাড়ে যে কোন স্থাপনা নির্মানের ক্ষেত্রে নদী দখল করা
যাবেনা। এক্ষেত্রে বন্দর এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুলোর মধ্যে সমন্বয় হওয়া
প্রয়োজন।
চট্টগ্রাম মহানগর নদী ও খাল উদ্ধার
সংগ্রাম কমিটির সাধার সম্পাদক সাংবাদিক আলিউর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে
কর্ণফুলী নদী দখলরোধে বন্দরের ব্যর্থতার কারনে প্রতিনিয়ত বেদখল হচ্ছে এ
নদী। কর্ণফুলী নদীর ক্যাফিটেল ড্রেজিং না হওয়ায় পলি জমে চর জেগে উঠার কারণে
একটি মহল প্রতিনিয়ত দখল প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। তিনি বলেন কর্ণফুলীসহ
চট্টগ্রামের নদীগুলো বাঁচাতে আমারা ইতিপূর্বে সাম্পান বাইচ,মানববন্ধনসহ
নানা কর্মসুচী পালন করেছি।
এ ব্যাপারে তিনি সংগঠনের পক্ষ থেকে
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান। নদী দখল করে বরফ কল নির্মান বন্ধ করা
না হলে শীঘ্রই কঠোর কর্মসুচী দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। বন্দরের
প্রাণপ্রবাহ জাহাজ চলাচলের মূল নেভিগেশন চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও
মেইনটেনেন্স ড্রেজিং না হওয়ায় ক্রমাগত ভরাট হয়ে নাব্যতা হারাচ্ছে কর্ণফুলী।
বিরান হয়ে যাচ্ছে নদীটির সুস্বাদু ও অর্থকরী মাছ। জীববৈচিত্র আজ ধ্বংসের
মুখে। কর্ণফুলী মোহনায় গড়ে উঠেছে শত শত অবৈধ স্থাপনা।
পাঁচ শতাধিক শিল্প,কল-কারখানা, অসংখ্য
জাহাজ নৌযানের বিষাক্ত বর্জ্যরে সাথে ৬০ লাখ নগরবাসীর পয়ঃবর্জ্যে মারাত্মক
বিষিয়ে উঠেছে এ নদী। গত বছরের ১২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম
সফরকালে বোট ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ-অসন্তোষ
প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে কর্ণফুলীর ড্রেজিং ও সুরক্ষায় বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট
নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ইতোমধ্যে এক বছর অতিবাহিত হলেও
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যত নির্বিকার রয়েছে।
চট্টগ্রামে ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমি চাই না কর্ণফুলীর অবস্থা ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর
মত মৃত হয়ে যাক। কারণ, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই নদীটা। কাজেই আমাদের
কর্ণফুলীর নাব্যতা যেন ঠিক থাকে সেজন্য ড্রেজিং করতে হবে। যেহেতু এখানে
পোর্ট আছে। সাথে সাথে কর্ণফুলী নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে। সাড়ে ৫শ’ ছোট-বড়
শিল্প-কারখানা, প্ল্যান্ট, দেশি-বিদেশি জাহাজ কোস্টার নৌযান ট্রলারের
বিষাক্ত বর্জ্য-ময়লা-জঞ্জাল ও আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে কর্ণফুলী নদী।
দীর্ঘদিন থমকে আছে ভূমি বেদখল মুক্ত করতে
মোবাইল কোর্টের অভিযান। কর্ণফুলী নদীর উভয় পাড়কে কেন্দ্র করে চলছে ভরাট ও
দখল-বেদখলের প্রতিযোগিতা। নদী গবেষক অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেছেন, দেশের
অন্য কোন নদ-নদীর তুলনায় কর্ণফুলী নদীর রয়েছে আলাদা কিছু ভূ-প্রাকৃতিক
বৈশিষ্ট্য। এগুলো সুরক্ষা জরুরী। কর্ণফুলী বাঁচলে বন্দর বাঁচবে। এ নদী
মানুষকে সবই দিয়েছে উদারভাবে। কিন্তু নদীটি দিন দিন ভরা যৌবন হারিয়ে ফেলছে।
বেপরোয়া দখল, দূষণ আর পলি-বালি ও জঞ্জালে ভরাট হয়ে বিপন্ন হয়ে উঠেছে
কর্ণফুলীর বুক।
No comments:
Post a Comment