প্রশ্ন ফাঁস, পরীক্ষার্থীদের হাসফাঁস - আমার বাঁশখালী ডটকম AmarBanskhali.Com

ব্রেকিং নিউজ

শীর্ষ বিজ্ঞাপন

321

নিউজ এর উপরে বিজ্ঞাপন

Tuesday, February 6, 2018

demo-image

প্রশ্ন ফাঁস, পরীক্ষার্থীদের হাসফাঁস

আমার বাঁশখালী ডেক্স:
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্র দিয়ে শুরুর পর গতকাল পর্যন্ত তিনটি পরীক্ষায় (দুটি বিষয়ের তিনটি পত্র) অংশ নিয়েছে নিয়মিত পরীক্ষার্থীরা। গতকাল অনুষ্ঠিত হয় ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা। অনুষ্ঠিত হওয়া এ পর্যন্ত তিনটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রই পরীক্ষার আগে ফাঁসের খবর বেরিয়েছে গণমাধ্যমে। ফেসবুকে অগ্রিম ঘোষণা দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমুসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব প্রশ্ন ফাঁসের খবর মিলছে।
তবে প্রশ্ন ফাঁসের নামে বিভ্রান্তির ঘটনাও ঘটছে কোথাও কোথাও। এ নিয়ে মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীরাই। বিভ্রান্তির পাশাপাশি হতাশা ও দুশ্চিন্তা নিয়েই পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে লাখো শিক্ষার্থীকে। ঘোষণা দিয়ে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের পেছনে ছুটবে নাকি নিজের প্রস্তুতিতে থাকবে, এ পর্যন্ত দেয়া পরীক্ষাগুলো ঠিক থাকবে নাকি নতুন করে আবার দিতে হবেণ্ডভেবে দিশেহারা পরীক্ষার্থীরা। সারা বছর প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষার সময় এ অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগে অস্থির পরীক্ষার্থীরা।
প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষতির পাশাপাশি রাষ্ট্রের গায়েও আছড় লাগছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক শিক্ষা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। এই শিক্ষাবিদের মতেফাঁস হওয়া প্রশ্ন পাওয়ার সুবাদে অনেক মেধাহীন শিক্ষার্থীরা মেধাবী বনে যাচ্ছে। আর কষ্ট করে পড়ালেখা করা মেধাবী একজন শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়ছে। তার কষ্টের মূল্য পাচ্ছে না। এতে করে মেধার সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না। যা শিক্ষার্থীর উপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এটি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক তির দিক। তবে এই প্রশ্ন ফাঁসের কারণে বড় তিটা হচ্ছে রাষ্ট্রের। এটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক ধরণের আস্থাহীনতা সৃষ্টি করছে।
ব্যবসায়ী আবুল হাসনাতের বড় ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা শুরুর পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে প্রশ্ন ফাঁসের খবরে তাঁর ছেলেটি খুবই হতাশ হয়ে পড়েছে বলে জানালেন বাবা আবুল হাসনাত। হতাশ তিনিও। আবুল হাসনাত বলছিলেনছেলেটি ভালো ফল করার জন্য সারা বছর প্রস্তুতি নিয়েছে। কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। কিন্তু এখন বাইরে শুনছে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। এখন তার প্রশ্নপরীক্ষার আগে প্রশ্ন পেয়ে কেউ কেউ যদি পরীক্ষা দেয়, তাহলে এত কষ্ট করে কি লাভ। আমি তো ভালো ফল করতে পারবো না। তারাই ভালো ফল করবে। আমি কোন জবাব দিতে পারি না। হতাশ কণ্ঠে আবুল হাসনাত বলেনএখন প্রচন্ড হতাশা ও দুশ্চিন্তা নিয়েই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ছেলেটি। এই পরিস্থিতি থেকে লাখলাখ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবককে মুক্তি দেওয়ার আকুতি জানিয়েছেন এই অভিভাবক।
মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেনপরীক্ষা শুরুর ৩০/৪০ মিনিট আগেই বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের খবর পাওয়া যাচ্ছে। যা মূলত টেজারী হতে প্রশ্নপত্র পরীক্ষা কেন্দ্রে আনয়ন এবং পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলার সময়কালেই ঘটছে বলে ধারণা। কতিপয় অসাধু শিক্ষক এ ধরণের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারেন।
তবে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের নিজ আসন গ্রহন করা বাধ্যতামূলক করায় ফাঁসের গুজব বা খবর পরীক্ষায় তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারছে বলে মনে করেন না চট্টগ্রাাম শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. শওকত আলম। এই বোর্ড কর্মকর্তার মতেযে সময়টাতে প্রশ্ন ফাঁসের গুজব বা খবর বেরুচ্ছে ওই সময়ে (পরীক্ষার ৩০/৪০ মিনিট আগে) সব পরীক্ষার্থীকে কিন্তু কেন্দ্রে নিজ আসন গ্রহন করতে হচ্ছে। এসময় তাদের বাইরে থাকার সুযোগ নেই। তাই একটি কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এই গুজব বা খবর পরীক্ষায় তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারছে বলে মনে হয়না। অবশ্য, ট্রেজারী হতে প্রশ্নপত্র আনয়ন ও কেন্দ্রে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলার ক্ষেত্রে নিয়ম কঠোর করার মাধ্যমে কড়া নজরদারিতে আনা হয়েছে উল্লেখ করে প্রফেসর শওকত আলম বলেন
এখন নিয়মের কঠোরতার কারণে কেন্দ্র সচিব বা অনুগত শিক্ষকরা নিজেদের ইচ্ছে মতো আর প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে পারবেন না। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি একজন কর্মকর্তা ও একজন পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতেই প্রশ্নের প্যাকেট খুলতে হবে কেন্দ্র সচিবকে। এর মাধ্যমে পরীক্ষার আগ মুহুর্তে প্রশ্ন ফাঁসের যে অভিযোগ, তা অনেকাংশেই রোধ করা যাবে বলে আমরা আশা করছি।
এদিকে, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় অভিভাবকরাও কম দায়ী নয় বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ও ইষ্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর মু. সিকান্দার খান। এই শিক্ষাবিদ মনে করেনসবাই না, তবে কিছু সংখ্যক অভিভাবক অতি উৎসাহী হয়ে নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের কাজটুকু করে থাকেন। গুজব বা প্রশ্ন ফাঁস যাই হোক না কেন, অভিভাবকদের ভূমিকা হওয়া উচিততাদের সন্তানকে বুঝানো। তোমার কাজ পড়ালেখা করা। অন্য কিছুতেই তোমার কান বা মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই জায়গায় ফাঁস হওয়া প্রশ্ন যোগাড়ে দৌড়ঝাপ করে প্রশ্নটি সন্তানকে এনে দিলে আদতে কার লাভ বা ক্ষতি হচ্ছে।
ওই মাবাবারা তা কি বুঝার চেষ্টা করেন? এর ফলে দেখা যাচ্ছে সন্তানটিও পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পাওয়ার জন্য পড়ালেখা না করে অপেক্ষায় থাকছে। এটা তো কোন ভাবেই ন্যায় সঙ্গত বলা যায় না। এতে করে সন্তানের ভবিষ্যতটাই যে তাঁরা ধ্বংস করছেন, মাবাবারা সেটি হয়তো অনুধাবন করছেন না।
প্রশ্ন ফাঁসের খবর বা গুজবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়ার মতো নয় উল্লেখ করে প্রফেসর মু. সিকান্দার খান বলেন, হয়তো একটি চক্র আছে। যারা এক ধরণের প্রশ্ন ফাঁসের পেনিক তৈরি করে। আবার একটি সুস্থ পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। অভিভাবকরা যখন দৌড়ঝাপ করেন বা দায়িত্বশীলরাও যখন এটি নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি করেন, তখন ওই চক্রটি আরো বেশি উৎসাহী হয়ে ওঠে। তাই অভিভাবক হিসেবে আমাদের দায়ও কোন অংশে কম নয় বলে আমি মনে করি।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষাবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেনপরিস্থিতি যে পর্যায়ে, বলতে গেলে এখন আমরা সঙ্গীন অবস্থায় উপনীত হয়েছি। প্রশ্ন ফাঁসে কেবল নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর উপর দায় চাপানো যৌক্তিক হবে না। এখানে সব পর্যায়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে প্রতীয়মান। এখন এটি জাতীয় সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। কিন্তু এই সমস্যা সমাধানে ততটা বলিষ্ঠ মানসিকতা বা উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এক ধরণের উদ্যোগহীনতা প্রতীয়মান। এই জাতীয় সংকট কাটাতে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন এই শিক্ষাবিদ।

No comments:

Post a Comment

পোস্টের নীচে বিজ্ঞাপন

Pages

Contact Form

Name

Email *

Message *